You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.20 | চিতলমারী ও দশমহলের গণহত্যা | বাগেরহাট - সংগ্রামের নোটবুক

চিতলমারী ও দশমহলের গণহত্যা, বাগেরহাট

১৯৭১ সালে চিতলমারী ছিল বাগেরহাট থানার উত্তর প্রান্তের একটি বাজার। এর পার্শ্ববর্তী হিন্দুপ্রধান কয়েকটি গ্রাম দশমহল নামে পরিচিত, যা তখন ছিল কচুয়া, মোল্লাহাট ও বাগেরহাট থানার সীমান্তবর্তী অঞ্চল।
২০ জুন, ৫ আষাঢ় ১৩৭৮ রোববার বাগেরহাটের পাকবাহিনী খুলনা, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অঞ্চলটি একযোগে আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুসারে একটি গানবোট হুলারহাট থেকে যাত্রা করে কালীগঙ্গা, তালতলা নদী অতিক্রম করে বলেশ্বরের মুখে দশমহলের পূর্ব সীমান্ত বাবুগঞ্জ বাজারে সকাল দশটার মধ্যেই এসে ভেড়ে, অন্য একটি গানবোট পিরোজপুর থেকে সোজা বলেশ্বর নদীপথে দশমহলের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত কালীগঞ্জ বাজারে এসে ভিড়ে। একইভাবে গোপালগঞ্জ থেকে আরো একটি গানবোট দশমহলের উত্তর সীমান্ত বড়গুনি বাজার পর্যন্ত আসে। একই সময়ে বাগেরহাট থেকে একটি গানবোট গোদাড়াঘাট পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। প্রতিটি গানবোটের আগে আগে চলছিল একাধিক স্পিডবোট। দশমহল এলাকার নিকটে এসে স্পিডবোটগুলো থেকে গ্রামের দিকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হচ্ছিল। তারপর নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে গানবোট ভেড়ানোর পর দশমহলের দিকে তাক করে বিভিন্ন সাইজের মর্টার নিক্ষেপ করা হতে থাকে।
বাগেরহাটে পাকবাহিনী এবং রাজাকারদের একটি দল অগ্রসর হয় স্থলপথে। মাত্র দু দিন আগে বাগেরহাট-চিতলমারী সড়কপথের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত কান্দাপাড়া বাজারে সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীনভাবে একটি বড় ধরনের গণহত্যা সংঘটিত করতে পারায় পথটি ব্যবহারের ব্যাপারে তারা অনেকটা নির্ভয় হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তারা বাগেরহাট থেকে শুরু করে একেবারে চিতলমারী পর্যন্ত যতক্ষণ চলছিল, ততক্ষণ রাস্তার দুই দিকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে শত শত লোককে হত্যা করে।
[১২৪] স্বরোচিষ সরকার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত