চক্রাখালী গ্রাম গণহত্যা, খুলনা
বটিয়াঘাটা থানায় প্রথম গণহত্যা ঘটে চক্রাখালী গ্রামে। ২৮ মার্চ খুলনায় স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে গেলে ও ৪ এপ্রিল খুলনার বেতার কেন্দ্র দখলের অভিযান ব্যর্থ হলে মুক্তিযোদ্ধারা অনেকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করে। বেতার কেন্দ্র আক্রমণকারী মুক্তিবাহিনীর একটা অংশ দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে বটিয়াঘাটার চক্রাখালী হাইস্কুলে আশ্রয় নেয়। কিন্তু স্থানীয় পিস কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা টের পেয়ে গোপনে খুলনায় অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীকে জানায়। এখানে সড়ক পথে পাকিস্তানি বাহিনী আসার কোনো রাস্তা না থাকায় নিকটবর্তী নদীতে টহলরত পাকিস্তানি বাহিনী চক্রাখালী আক্রমণ করে। গানবোট থেকে স্কুল লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করলে স্কুল ভবনটির মারাত্মক ক্ষতি হয়। অবশ্য এর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা সে স্থান ত্যাগ করে। এরপর পাকিস্তানি নৌবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে চলে যায়।
খুলনায় প্রাথমিক প্রতিরোধের পর খুলনা শহরের বাইরে এটিই ছিল প্রথম আক্রমণ। গ্রাম পর্যায়ে এসে এভাবে আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও গণহত্যায় ভীত হয়ে এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ প্রভৃতি সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন ভারতে আশ্রয় নেয়ার জন্য এলাকা ছাড়তে শুরু করে। এ সুযোগে পিস কমিটি ও মুসলিম লীগের লোকজন নির্বিঘ্নে পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর দখলে নিতে থাকে। ক্রমান্বয়ে এ ধরনের কাজে তারা আরো উৎসাহিত হয়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত