You dont have javascript enabled! Please enable it!

চড়ারহাট গণকবর, দিনাজপুর

এক নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার চড়ারহাট ও আন্দোল গ্রামে। পাক হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে সেদিন এ দুটো গ্রামে শহীদ হয়েছিল ১৫৭ জন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিপাগল দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয় চড়ারহাটে। অন্যদিকে হাকিমপুর (হিলি) থানার ছাতনি গ্রামে শক্তিশালী ঘাঁটি থেকে ৭ জন খানসেনা গরুগাড়ি নিয়ে চড়ারহাটের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে বিরামপুর প্রধান ক্যাম্পে যাচ্ছিল। দলটিকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় গাড়োয়ান স্থানীয় রাজাকার আবদুস সাত্তার। খানসেনাদের গরুগাড়িতে যাওয়ার বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের দৃষ্টিগোচর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা গাড়িটিকে অনুসরণ করে চড়ারহাটের দুই মাইল পশ্চিমে বিজুইল হাটখোলা নামক স্থানে আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলে ৭ জন পাকসেনাই নিহত হয়। রাজাকার গাড়োয়ান সাত্তার কোনো রকমে প্রাণে রক্ষা পেয়ে খবর দেয় বিরামপুর আঞ্চলিক পাকসেনা ক্যাম্পে। ৯ অক্টোবর রাতে পাকসেনারা ঘেরাও করে চড়ারহাট এবং আন্দোল গ্রামে। অস্ত্রের মুখে এই দুটো গ্রামের সকল পুরুষকে একত্র করা হয়। দলার দরগা নামক স্থানে ভেঙে পড়া কালভার্ট মেরামতের কথা বলে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। খানসেনাদের এক কর্মকর্তা তাদের সকলকে লাইন বেঁধে দাঁড়াতে বলে। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামবাসীর কাছে খানসেনাদের অশুভ উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। তখনই গর্জে ওঠে হানাদার বাহিনীর চারটি সাব মেশিনগান। অবিরাম গুলিবর্ষণে মুহূর্তের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে ১৫৭ গ্রামবাসী। সেদিন দলার দরগায় যাদের মৃত্যু ঘটেছিল তাদের ভাগ্যে জানাজা কিংবা কাফন জোটেনি। মশারি, লেপের কভার, শাড়ি, লুঙ্গি পেঁচিয়ে তাদের দাফন করা হয়। অনেক কবরে একই সঙ্গে ৪-৫টি করে মৃতদেহ দাফন করা হয়।
[২৪৬] সাজেদুর রহমান শিলু

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!