চরের হাট বধ্যভূমি, খুলনা
খুলনার চরের হাটের হত্যাযজ্ঞের ভিয়েতনামের মাইলাই-এ সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করা যায়। খুলনা শহরের অপর পাড়েই রয়েছে চরের হাট। আর এখানেই ঘটল সেই ভয়াবহতম হত্যাকাণ্ড। তখন এপ্রিল মাস। দৌলতপুরের দিক থেকে লঞ্চগুলো খুলনার দিকে আসছিল। লঞ্চগুলো ছিল যাত্রী ভর্তি। এই চরেরহাটে পাকসেনারা একে একে সব লঞ্চ থামাতে লাগল। লঞ্চের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ-এ। পাকসেনারা সবাইকে লঞ্চ থেকে বেরিয়ে নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলল। নারী-শিশু-পুরুষ হুড়মুড় করে লঞ্চ থেকে নেমে লাইন দিল। তারপর পাকসেনারা তল্লাশির নামে লঞ্চের যাত্রীদের সমস্ত মালামাল লুট করে। তারপর তারা সারিবদ্ধ যাত্রীদের কাছে এসে কানের সোনা, হাতের চুড়ি, ঘড়ি, আংটি, টাকা-পয়সা সব ছিনিয়ে নিল। এরপর এসব হতভাগ্য যাত্রীর ওপর চালানো হলো গুলি। গুলি চালিয়ে সবার দেহ ঝাঁঝরা করে দিল। সে এক করুণতম দৃশ্য। প্রায় পাঁচ শ লোকের রক্তের বন্যায় নদীর পাড় নদীর জল লালে লাল হয়ে উঠল। মানুষের আর্তনাদ চিৎকারে চরের হাট প্রকম্পিত হলো।
[ ১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত