You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোপালপুর গণহত্যা, নোয়াখালী

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানা সদর থেকে আনুমানিক নয় কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে গোপালপুর বাজারের অবস্থান। এপ্রিলে পাকিস্তানি বাহিনীর নোয়াখালী প্রবেশ করার কিছুকাল পরও গোপালপুর রয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্জয় ঘাঁটি হিসেবে। পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট সেন্টারে। এই খবর পৌঁছে যায় জামায়াত, মুসলিম লীগ ও শান্তি কমিটির মাধ্যমে হানাদার বাহিনীর কাছে। তারা কয়েক দফা চেষ্টা চালায় এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের খুজে বের করতে।
সময়টা ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস। প্রচুর বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টির আগমন ঘটে পূর্বের দিন ১৮ আগস্ট থেকে। ভোররাতে বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের কাছে বাংলাবাজার শামছুন্নাহার হাইস্কুলে এসে অবস্থান নেয় বেশকিছু পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকার। ১৯ আগস্ট সকাল বেলা সূর্য তখনো মেঘের আড়ালে ঢাকা। সকাল আনুমানিক আটটা নাগাদ গোপালপুর বাজারে পৌঁছে যায় কয়েকশ পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকার। তারা দুভাগে বিভক্ত হয়। রাজাকারদের কুঁড়ি-পঁচিশ জনের একটি দল বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে এবং বাকিরা মূল রাস্তা দিয়ে এসে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। সকাল থেকেই বাজারের অর্ধশতাধিক দোকান অগণিত মানুষের প্রাণ চাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল। কেউ চা পানে রত। আবার কেউ কেউ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনারত। কেউ কেউ এলাকার ছেলেদের অবস্থান, অপারেশন, গোলাগুলি অর্থাৎ অস্থির অবস্থা নিয়ে বিতর্করত। এমন সময় অতর্কিতে হানা দিল পাকিস্তানি হায়েনার দল। যারা পালাতে পারল তারা বাঁচল। যারা পারেননি এই রকম অর্ধশতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী ও দোকানি শিকার হলো নির্মম হিংস্রতার। একে একে ওদের সবাইকে ধরে এনে এক লাইনে দাঁড় করানো হয় বাজারের পূর্ব পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট খালটির পাড়ে। বাজারের দোকানে দোকানে তল্লাশি করে ওরা খুঁজতে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা। কেননা তখনকার বেশির ভাগ বাঙালি, যারা সরাসরি যোদ্ধা ছিল না, তারা বাংলাদেশের পাতাকা রাখত, দেখত, এর মধ্য দিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত। যখন গ্রাম-গঞ্জে দোকানপাটে দেখা যেত এই পাতাকা। ছিদ্দিকউল্লাহর দোকানে পেয়ে যায় তারা স্বাধীন বাংলার পতাকা। ক্রোধে ফেটে পড়ে ওরা। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন মুসল্লিকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি প্রায় পঞ্চাশজন নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে ব্রাশফায়ার করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ব্রাশফায়ারের পরও যাঁরা বেঁচেছিলেন তাঁদের বেয়োনেট চার্জ করে পাশবিক উল্লাস প্রকাশ করার পর পশুরা হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা লকিয়তউল্লাহর বয়স ছিল তখন ২২ বছর। তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারের বলেন, ১৯ আগস্ট গোপালপুর বাজার আক্রমণ করে প্রায় ২৭-২৮ জনকে হত্যা করে। আমরা সবাই দৌড়ে পালিয়ে যাই। যে যেদিকে পেরেছে সেদিকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। শুধু গণহত্যাই নয় তারা ৪-৫ জন নারীকে ধর্ষণ করেছে। আধাঘণ্টার মধ্যে তারা সকল হত্যা শেষ করে।
[৪৪] জোবাইদা নাসরীন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!