You dont have javascript enabled! Please enable it!

গালিমপুর গণহত্যা, সিলেট

সিলেটের বালাগঞ্জ থানার একটি নিভৃত পল্লী গালিমপুর। ১৯৭১ সালের ১৮ মে পার্শ্ববর্তী বল্লভপুর গ্রামবাসীর সঙ্গে একটা বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। সাথে সাথে দুই গ্রামের বিবাদে জড়িয়ে পড়া দুই পক্ষের এক বৈঠকে ডাকা হয়। বৈঠকটি বসে গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সালিসের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হয় বিবাদের বিষয়টি। খুশিমনে উভয় গ্রামবাসীই চলে যান যার যার বাড়ি। কিন্তু ফাজিলপুরের জনৈক মদরিছ আলী ও তাঁর সহযোগীরা ১৯ মে সকালবেলা এসে জানালেন যে, গ্রামের ঝগড়া-ঝাঁটির সংবাদ শুনেছেন শেরপুরে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন। তাকে টাকা-পয়সা না দিলে তিনি গ্রামে আসবেন বিচার করতে। নিরীহ গ্রামবাসী তাঁদের হাতে গুজে দিলেন দুই হাজার পাঁচশ টাকা। কিন্তু মাত্র এক ঘন্টা পর হানাদার বাহিনীর তিন তিনটি নৌকা ওরমপুর হয়ে বল্লভপুর এসে পৌছায়। এসেই তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুর রাজা চৌধুরীকে নির্দেশ দেয় গালিমপুর গ্রামটি পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে। মাহমুদুর রাজা সে নির্দেশ পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তাঁর ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। হাত-পা বেঁধে সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে গালিমপুরে।
গ্রামে ঢুকে একই জায়গায় পাকবাহিনী ধরে নিয়ে আসে ছয়জনকে এবং অল্পক্ষনের ভেতরে গুলি করে হত্যা করে তাঁদের। কুশিয়ারার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের পাশে তাঁদের মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল।
এরপরই পাকবাহিনী গোটা গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং যেখানে যাকে পায় তাঁকেই গুলি করে হত্যা করে। লুট করে নেয় গ্রামবাসীর সোনাদানা, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র।
পাকবাহিনীর বর্বর সশস্ত্র হামলায় ঘন্টা দুই-তিনেকের মধ্যেই সমস্ত গ্রামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মাত্র চারটি বাড়িই অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। বাদবাকি বাড়ি মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। লুণ্ঠিত হয় টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় ও সোনাদানাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সেই সাথে দুজন কুলবধূকেও তারা ধরে নিয়ে যায়। দুদিন পর তারা ফিরে আসেন।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!