You dont have javascript enabled! Please enable it!

গণহত্যা

গণহত্যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিকৃষ্টতম অপরাধ। গনহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ genocide শব্দটি গ্রিক শব্দ জেনোস (genos) এবং ফরাসি বাঃ ল্যাটিন শব্দ সাইড (cide, cida) এ দু’টো শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। জেনাস অর্থ হচ্ছে জাতি, শ্রেণী, সেক্স। আন্তর্জাতিক আইনে জেনসাইড কথাটির অর্থ হল কোন সরকার দ্বারা ইচ্ছেকৃতভাবে কোন জাতিগত, ধর্মীয় বাঃ গোত্রীয় দলভুক্ত জনগণের বিনাশ করা। জেনোসাইড শব্দটি ১৯৪৪ এ প্রথম গঠিত হয় ; কিন্তু এর দ্বারা যে অপরাধ বুঝানো হয় টা ইতিহাসে বারবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে (১৯৩০-এর দশক) ও যুদ্ধকালীন নাৎসি জার্মানী ইউরোপীয় ইহুদি সমাজ ও পুর্ব ইউরপের অনান্য জাতীয় দলকে ধ্বসং করার জন্য রীতিমত প্রচেষ্টা চালায়। ১৯৪৫-এ ন্যুরেনবার্গ বিচারালয়ের সনদে জাতিগত বা ধর্মীয় কারনে মানব গোষ্ঠির ওপর উৎপীড়নের তালিকা প্রদত্ত হয়। এ তালিকা অনুসরণ করে বিজয়ী মিত্রপক্ষ নাৎসি অপরাধীদের বিচারের ব্যাবস্থা করেন এবং এভাবে যে সব সরকারি কর্মচারী গণহত্যার নীতি কার্যকরী করার জন্য নিয়জিত ছিল তাদের ব্যাক্তিগত ভাবে আদালতে ঐসব অপরাধমুলক কজের জন্য জবাবদিহি করার রেওয়াজ স্থাপিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৪৯ – এ সমাপ্ত একটি কনভেনশনের মাধ্যমে বিশদভাবে গণহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এবং যে রাষ্ট্রে অপরাধ অনুষ্ঠিত হয় সেখানকার উপযুক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় (national) আদালতগুলো দিয়ে অথবা আন্তর্জাতিক আদালত দিয়ে বিচারকাজ শেষে দোষীদের শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করে [P.N. Drast প্রণীত Genocide (1959) দ্র.] এ আইন মতে নিম্নের যে কোন আচরণ গণহত্যার পর্যায়ে পড়বে। কোন গোষ্ঠইর সদস্যদের হত্যা করা ; কোনো গোষ্ঠইর সদস্যদের সাংঘাতিক দৈহিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা; ইচ্ছাকৃতভাবে কোন গোষ্ঠির উপর এমন পরিকল্পিত জীবনধারা চাপিয়ে দেয়া যাতে তাদের দৈহিক অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে বিনষ্ট হয় ; কোন গোষ্ঠির মধ্যে মানবজন্ম রোধের জন্য কোন ব্যবস্থা প্রয়োগ করা ; কোন গোষ্ঠীর শিশুদের জোর করে অন্য গোষ্ঠীতে পাঠিয়ে দেয়া। নিম্নের আচরণগুলো শাস্তযোগ্য গণহত্যা; গনহত্যার জন্য ষড়যন্ত্র; গনহত্যার পক্ষে সরাসরি ও প্রকাশ্য উত্তেজনা সৃষ্টি ; গণহত্যার প্রচেষ্টা ; গণহত্যার সহযোগিতা।যে ব্যক্তি শেষোক্ত বিধিতে বর্ণিত গণহত্যা বা অন্য কোনো আচরণ করবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে, তা সে শাসনতন্ত্র অনুসারে দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত শাসক (rulers) সরকারি কর্মচারী বা সাধারণ ব্যক্তিবিশেষ হোক না কেন।
[৫৮] মঞ্জুমা সেলিম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!