You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.21 | কোমরপুর হত্যাকাণ্ড | ফরিদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

কোমরপুর হত্যাকাণ্ড, ফরিদপুর

ফরিদপুর শহরতলির গ্রাম কোমরপুর। শহর থেকে ৫ কিমি দূরে অবস্থিত। ওই গ্রামে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজহারুল ইসলামের বাড়ি। তিনি বাড়িতে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন, পরামর্শ দিতেন। ঐ বাড়িতেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধারা আসা-যাওয়া করত, কখনো কখনো অবস্থানও করত। স্থানীয় রাজাকারের মাধ্যমে সেই খবর সেনা ক্যাম্পে চলে যায়।
২১ আগস্ট ‘৭১। ভোর না হতেই পাকসেনারা আজাহার মিয়ার বাড়িতে ছাড়াও হয়। বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তাঁদের পথে দেখিয়ে এসেছিল স্থানীয় রাজাকার নওশের আলী খান (নসু)। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, নওশের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে প্রথমে রাইফেল দিয়ে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনারা বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। গুলির আঘাতে ঘরের বেড়া, চাল ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
ওদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে আজাহার মিয়ার কিশোরী কন্যা রোজিনা ইসলাম রোজী (১৬) ও সাবিনা ইসলাম টপি (৬) বুলেটবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং বড় মেয়ে সেলিনা ইসলাম শেরী (১৮), সুলতানা ইসলাম লাকী (১৪) ও তাঁর মা আমেনা বেগম বুলেটবিদ্ধ হলে আজাহার মিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে আঙিনায় এসে হাত উঁচিয়ে বলেন, ‘দোহাই তোমাদের আমার নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করো না। ওরা বলল, ‘মুক্তি কোন হ্যায়?’ আমি মুক্তিযোদ্ধা আমাকে হত্যা করো’। রাইফেল তাক করলে তাঁর স্ত্রী তাকে আগলে দাঁড়ালেন, আল্লাহ রাসূলের নামে অনুনয়-বিনয় করলেন। কোনো কাজ হলো না, রাইফেল গর্জে উঠল। দুজনই লুটিয়ে পড়লেন। তহুরা ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারালেন। আজাহার মিয়া বুলেটবিদ্ধ বেঁচে থাকলেন।
ঐ পৈশাচিকতায় অবলা গবাদিপশু রক্ষা পেল না। দুটি গাভীও প্রাণ হারায়। রাজাকার নসুও সেনাবাহিনীর ক্রস ফায়ারিংয়ে নিহত হয়। বাড়ির আঙিনায় তিন শহীদকে সমাহিত করা হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত