ক্রিসেন্ট জুট মিল বধ্যভূমি, খুলনা
ক্রিসেন্ট জুট মিল ছিল আর এক বধ্যভূমি। এখানে স্বাধীনতার পর অসংখ্য নরকঙ্কাল পাওয়া যায়। বিশাল আয়তনের এ মিলটির পাশ দিয়ে ভৈরব নদী বাঁক নেয়ায় এ মিলের দু’পাশেই নদীর স্রোত প্রাবাহিত। ফলে এ মিলের দীর্ঘ নদীর তীর বাগালি নিধনের সহায়ক হয়। এখানে অসংখ্য লোককে ধরে এনে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ক্রিসেন্ট জুট মিলে বাঙালি হত্যা ও নির্যাতনের আর এক নতুন কৌশল সম্পর্কে জানা যায় শাহরিয়ার কবিরের ধারণকৃত ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীর জবানবন্দিতে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ক্রিসেন্ট জুট মিলের ভৈরব নদী সংলগ্ন কোয়ার্টারে বসবাসরত অবস্থায় স্বচক্ষে যা দেখেছেন তারই বিবরণ দিয়েছেন গভীর রাতে একাধিক ট্রাকভর্তি মানুষ এনে ক্রিসেন্ট জুট মিলের পাটের গুদামের পাশে নামাত এবং তাঁদের হাত-পা-চোখ বাঁধা অবস্থায় এক এক করে পাট কাটা মেশিনের মধ্যে শরীর থেকে মাথা কেটে আলাদা করে ফেলত। তিনি এ মেশিনতিকে গিলোটিনের সাথে তুলনা করে ঘাতকদের নৃশংসতার এক লোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছেন। ক্রিসেন্ট জুট মিলের কাস্টমস অফিসারের কোয়ার্টারটিও নির্যাতন সেলে পরিনত করা হয়। এ কোয়ার্টার সংলগ্ন ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরবে সহজে প্রবাহিত করে দিত আর লাশগুলো ভৈরবে ছুঁড়ে ফেলত। ক্রিসেন্ট জুট মিলের সেন্ট্রাল এক্সাইজ ইস্পেক্টরকে হত্যা করে তাঁর লাশ টুকরা টুকরা করে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে জানা যায়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত