You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.22 | কালোপুল বধ্যভূমি ও গণকবর, নোয়াখালী - সংগ্রামের নোটবুক

কালোপুল বধ্যভূমি ও গণকবর, নোয়াখালী

১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে প্রবেশ করে তখন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলো,তারা প্রতিবন্ধক সৃষ্টির জন্য প্রধান সড়কের কালোপুল বা কালো সেতুটি ২০ এপ্রিল ভেঙ্গে দেয়। পাকিস্তানিরা কালোপুলের কাছে এসে সাময়িক ভাবে থমকে দাঁড়ালেও তাদের গতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।পাকসেনারা স্থানীয় লোকজনদের ধরে এনে অতি দ্রুত কালোপুলটি সচল করে তোলে।পরবর্তীতে এই কালোপুলে এবং চৌমুহনির চৌরাস্তায় অবস্থিত ‘পলিটেকনিক্যাল’ হাইস্কুলটি নোয়াখালী জেলার সর্ববৃহৎ কসাইখানায় পরিণত হয়।পাকিস্তানীরা স্বাধীনতাকামী বাংগালীদের ধরে এনে পলিটেকনিক্যাল হাই স্কুলে আটকে রেখে চালাতো অকথ্য নির্যাতন।তারপর এ হাই স্কুলের মাত্র ৫০ গজ উত্তরে কালোপুলের উপর দাড় করিয়ে হতভাগ্য বাঙ্গালিদের হত্যা করে নিচে খালে ফেলে দিত।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,প্রতিরাতেই বন্দিদের কা;লো পুলের উপর নিয়ে এসে হত্যা করা হত।প্রথমদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীই এই কাজটি করত।পরে স্থানীয় রাজাকাররাই নিজ হাতে বন্দীদের হত্যা করেছে বলে জানা যায়।কালোপুলের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে যে খাল সে খালের দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য গণকবর।নাজেরপুর চৌরাস্তার গণকবরেও ঠাঁই পেয়েছে অসংখ্য মুক্তিকামী বাংগালি।এইসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি বেগমগঞ্জ থানার কালিকাপুর ইউনিয়নের দরবেশ এবং গণিপুর ইউনিয়নের আব্দুর রব যুক্ত ছিল বলে জানা যায়।“কালোপুল”এর দু-তিন গজ উত্তরে রয়েছে কয়েকজন শহীদের একটি কবর,কিন্তু আজ সেই গণকবরের অস্তিত্ত্ব নেই বললেই চলে।কবরটি মাটির সাথে মিশে গেছে।পলিটেকনিক্যাল হাই স্কুল মাঠের উল্টোপাশে একটি ছোট কবর পাওয়া যায়।প্রত্যক্ষদর্শী সোলেমান জানিয়েছেন,”আর্মিরা যখন এদিক-ওদিক যেত।তখনই আমরা উঁকিঝুঁকি দিতাম।মাঝে মাঝে পচা গন্ধ আসতো।ভেতরে গিয়ে দেখি চারজন মহিলার লাশ পড়ে আছে।যখন এখানে (পলিটেকনিক্যালে হাইস্কুল) অনেক মেয়েকে নিয়ে আসতো তাদের বিভিন্ন স্থানে গ্রিলের সঙ্গে বেধে রাখত।অত্যাচার করত।আমরা তখন স্কুলের প্রাঙ্গনের ভেতর মেয়েদের অত্যাচার শুনতে পেতাম।আমরা তাড়াতাড়ি গাছ পালায় গর্ত করে ওই চারজনকে একসাথে মাটি চাপা দিলাম।তাদের পরনে শাড়ী ছিল আর দুজনের সিঁথিতে ছিল সিঁদুর।তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারেনি”।
[৪৪] জোবাইদা নাসরিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত