You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাশিয়াবাড়ি নির্যাতন গণহত্যা, গাইবান্ধা

রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমার পলাশবাড়ী থানার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী এলাকায়। পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের এদেশীয় দোসররা হত্যা করেছিলো এলাকার প্রায় ১০০ মানুষকে।
আম পাকার সময় জ্যৈষ্ঠ মাস দিনটি ছিল শুক্রবার। আগের রাতেই এলাকা জুড়ে কারফিউ ঘোষণা করা হয়। পরদিন ভোরবেলা থেকেই ধরে আনা হচ্ছিলো এলাকার অসংখ্য মানুষকে। জড়ো করা হচ্ছিলো কাশিয়াবাড়ি স্কুল মাঠে। করতোয়া নদী পেরিয়ে পাশের জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে এসেছিলো পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের অবাঙ্গালি দোসররা। কাশিয়াবাড়ী প্রাইমারি স্কুলে বাঙ্গালিমহিলাদের আটকে পাশবিক নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা।আর স্কুল মাঠে বাছাই করা হচ্ছিলো আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের।ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমেশ উদ্দিনকে বাছাই করার দায়িত্ব দিলে তারা এ কাজে অসম্মতি জানায়।পাকিস্তানি সেনারা দুজঙ্কেই চাবুক মারে।পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাজে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও সদস্য আবুল কালামকে দায়িত্ব দিলে তারা অপারগতা প্রকাশ করে।পরে ঘোড়াঘাট থেকে আসা অবাঙ্গালি রমজান আলি আদিম পদ্ধতিতে হিন্দু বাছাই শুরু করে। আলাদা করতে থাকে মুসলমান-হিন্দু,যুবক-মধ্যবয়সী-বৃদ্ধ এভাবে।
ভাগ্যগুণে মৃত্যুর হাত থেকে বেচে যান তখনকার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র পশ্চিম রামচন্দ্রপুরের গোপীরঞ্জন সরকার।বর্ত্মানে পল্লী চিকিৎসক গোপিরঞ্জন বলেন, হঠাৎ করেই তার বেলায় এসে ঐ পদ্ধতিতে বাছাই বন্ধ হয়ে গেল।কমক বয়স বলে গোপীরঞ্জনের সতীর্থ কাশিয়াবাড়ি হাইস্কুলের বর্তমান করণিক আনিছার রহমান মন্ডল ও বর্তমানে ডাকপিয়ন আমীর আলী অলৌকিক ভাবে বেচে যান।তাদের উপর লুট করা গরু-ছাগল করতোয়া নদী পার করিয়ে পাকিস্তান সেনাদের ক্যাম্পে পৌছে দেয় পাকিস্তানী হানাদাররা।এরপর বাছাই করা শখানেক মানুষকে আলাদা করে বেধে ফেলা হয়।তাদের ঘিরে শুরু হয় খোল-করতাল বাজিয়ে আনন্দ উৎসব।আহতদেরও নাচতে বাধ্য করা হয়।তারপর শুরু হয় শেষ যাত্রা।কাশিয়াবাড়ি স্কুলমাঠ থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিণে চতরাঘোড়াঘাট সড়কের পশ্চিম্পাশে রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি ডোবার চারধারে সারিবদ্ধ ভাবে বসানো হয় অসহায় মানুষ গুলোকে।তারপর হত্যা যজ্ঞে মেতে ওঠে অবাঙালি রমজান আলী ও হানিফ মওলানা।এক বিরাট দা দিয়ে নৃশংস ভাবে তারা জবাই করতে থাকে একজনের পর একজন।প্রত্যেকের ঘাড়ে কুপিয়ে ঐ দুই খুনী লাথি মেরে ফেলে দিতে থাকে পাশের ডোবায়।হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন কাশিয়াবাড়ি হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সপ্তনা গ্রামের হারেছ আলী মন্ডল,কাশিয়াবাড়ীর আমানউল্যা মন্ডল,রাম বল্লভ কর্মকার,নাজিরউদ্দিন, বাহারউদ্দিন, আনছার আলী, রাজেন্দ্রনাথ শীল, আকালু শেখ, রামচন্দ্রপুরের বিনোদবিহারী, কিশোরগাড়ীর শিক্ষক গোলজার রহমান,রামচন্দ্রপুরের অতুল চন্দ্র,কুমোদ চন্দ্র,জ্ঞানেন্দ্র নাথ,উপেন্দ্রনাথ,জাইতরের ক্ষুদিরাম, গৌরহরি, নরেন্দ্রনাথ, শিতারাম, চেংটু মন্ডল, কালু দাস, গাদু সরকার,হায়দার আলী।
[৪২১] জহুরুল কাইয়ুম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!