কামালপুর গণহত্যা, সিলেট
কামালপুরে এসে পাকবাহিনী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যাকে সামনে পায় তাঁকেই গুলি করে হত্যা করে। সুখময় দত্ত নামের এক ব্যাক্তিকে এখানে হত্যা করা হয়, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রসহ। হত্যা করা হয় সাধন দত্তকেও। হিন্দু সম্প্রদায়ের সহায়সম্পদ লুট ও হস্তগত করার হীন মনোবৃত্তি থেকে হানাদারদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছিল স্থানীয় কিছু লোক। তেমনি একজন ব্যক্তি মদরিছ চৌধুরী। সে-ই পাকবাহিনীকে নিয়ে যায় প্রসন্নচন্দ্র ধরের বাড়িতে। গ্রামবাসী তখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও প্রসন্নচন্দ্র ধর বাড়ির মায়া কাটাতে পারেননি। তাই পরিবারের সকল সদস্যসহ ঠাকুরঘরে ঢুকে তিনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকসেনারা প্রথমে এঁদের খুজেও বের করতে পারেনি। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশে এই পরিবারের একটি শিশুর পক্ষে আর বেশিক্ষন চুপ করে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। হঠাত করে কেঁদে ওঠে। দালাল মদ্রিছ চৌধুরী কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে ঠাকুরঘরে নিয়ে যায় পাকসেনাদের। দরজা ভেঙ্গে বের করে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় সবাইকে। তারপর বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয় সকলের বুক। শুধু তিনিই নন পদ্মভূষণের স্ত্রী এবং তিনটি মেয়েকেও প্রাণ দিতে হয় একই সঙ্গে।
এ গ্রামেরই এক বিরাট অংশজুড়ে বেদেপট্টি। এখানকার প্রায় সমস্ত লোকজন এর আগেই গ্রামছাড়া হয়ে গেছিলেন। তারপরও যে দু দশজন লোক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই পাকবাহিনীর উপস্থিতির খবর পেয়ে পলায়নরত অবস্থায় প্রাণ দিতে হয়। পাকবাহিনীর লাগিয়ে দেয়া আগুনের গ্রাসেও এ গ্রামের যারপরনাই ক্ষতিসাধিত হয়।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত