কলাবাড়ি গ্রাম গনহত্যা, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ
’৭১-এর ১২ অক্টোবর কোটালীপাড়া থানার (শরীয়তপুর) কলাবাড়ি গ্রামের বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় ২শ’ নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিবাহিনী। ক্যাপ্টেন হেমায়েত উদ্দীনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঐদিন ভোররাতে মধুমতি নদী থেকে পাকবাহিনীর একটি খাদ্য সরবরাহকারী কার্গো কোটালীপাড়া থানার কলাবাড়ি গ্রামে ছিনিয়ে আনে। কার্গোটি রাখা হয় রাধাকান্ত হাইস্কুল সংলগ্ন ঘাঘর নদীর পাড়ে। খবর পেয়ে মানিকদি ও বাশবাড়িয়া থেকে বিপুল সংখ্যক পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কলাবাড়ি অবস্থানের ওপর হামলা করে। গানবোটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভাসমান লোকজনকে হানাদার বাহিনী ধরে এনে পাশবিক নির্যাতন চালায়। একই দিনে প্রায় ২শ’ গ্রামবাসীকে ধরে এনে চোখ-হাত-পা বেঁধে বেয়োনেট চার্জ করে ঘাঘর নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। একশ দশ বছরের বৃদ্ধ অম্বিকাচরণ বাড়ৈও হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা পাননি। শুধুমাত্র কালু নামক নলুয়া গ্রামের এক যুবক অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। বেঁচে যান তখনকার বালক আজকের তিরিশোর্ধব কৃষক উপেন অধিকারীও। হানাদার বাহিনী তাঁর বাবা ষাটোর্ধব গোপাল অধিকারি ও ভাই বিজয় অধিকারীকে ধরে নিয়ে যাবার সময় তাকে বেয়োনেট চার্জ করে কচুরিপানার মধ্যে রেখে যায়। পরে তাঁর বৃদ্ধ মা তাকে বাচিয়ে তোলেন।
শরীয়তপুরে পাকবাহিনী আক্রমণ চালিয়ে যেসব জনগণ এবং নারীকে নির্যাতনের পর হত্যা করে তাঁদের কিছু বিচ্ছিন্ন গণকবরে সমাহিত করা হয়।
[৩৪] ডা. এম. এ. হাসান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত