কাটাখালি পার্ক নির্যাতন কেন্দ্র ও গণহত্যা, গাইবান্ধা
কাটাখালী ব্রিজের দক্ষিন-পশ্চিম কোনে পথচারিদের অবকাশ যাপনের জন্য ছোট্ট একটি পার্ক ছিল।এই পার্কটির বৃক্ষরাজি পাকবাহিনীর ধর্ষণ ও গনহত্যার নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলমান যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে সেখান থেকে মেয়েদের নামিয়ে নে পারক্কের একটি ছোট্ট কক্ষে বেঁধে ধর্ষণ করা হতো; এরপর হত্যা করে পার্কের পাশে নদীতে ফেলে দেয়া হতো। গোবিন্দগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে ছাত্র-যুবকদের ধরে এনে এই পার্কের কক্ষে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে এখানে পাঁচ শতাধিক মানুষ পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। যুদ্ধের পর কাটাখালীর আশপাশে শতাধিক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে। কত লাশ যে নদী দিয়ে ভেসে গেছে, তাঁর কোনো হিসেব নেই। পার্ক থেকে ২৫০ মিটার দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি বৃহৎ গণকবর।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনী কাটাখালী ক্যাম্প থেকে গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে এসে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের হত্যা করার জন্য অভিযান চালাতে থাকে। এপ্রিলের শেষলগ্নে গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ চিনিকল সড়কের কোচাশহর নামক স্থানে সেখানকার ইউ.পি আওয়ামী লীগ সভাপতি দুদু সরকার এবং পালপাড়ার কালাপাল গাছ কেটে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। পাকিবাহিনীর চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করায় পাকবাহিনী তাঁদের ধরে রাস্তার ওপর ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। গুরুত্বর আহত অবস্থায় অবশেষে কালাপাল প্রাণে রক্ষা পাআন। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পাকবাহিনী এ এলাকার হিন্দুপাড়া, গোপালপুর এবং কুমড়াডাঙ্গা গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে ঘরবাড়ি ভষ্মীভূত করে।
[১১] বিষ্ণু নন্দী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত