You dont have javascript enabled! Please enable it!

উদ্ববগঞ্জ নির্যাতন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁর উদ্ববগঞ্জ আর্মি ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানিদের অপর নির্যাতন কেন্দ্র। রাজাকার ময়েজউদ্দীন সফেদার পাকসেনাদের খুশি করার জন্যে আমিনপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের প্রনব ঘোষের মেয়ে বিভা রানী ঘোষকে (ছাত্রী) ধরে আনে। তুলে দেয় এ. এস. এম. সোলায়মানের সহযোগী জমির আলী কেরানির হাতে। জমির আলী কেরানি পাকসেনা ক্যাম্পে (বর্তমানে টি.এন.ও-এর বাসা উদ্ববগঞ্জ) হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদার বর্বররা মেয়েটিকে পাশবিক নির্যাতনের পর অর্ধমৃত অবস্থয় ছেড়ে দেয়।
সোনারগাঁয়ের নির্যাতন প্রসঙ্গে সংবাদদাতা লিখেছেন, জমির আলী কেরানির নেতৃত্বে পাকবাহিনী বৈদ্যেরবাজার স্কুলের পূর্ব-উত্তর দিকে নরেন্দ্র প্যাটেলের বাড়িতে হামলা করে। তঈয়েবুর রহমান সে সময় ঘটনাস্থলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যান এবং নৌকায় করে ৫ যুবতী মেয়েকে পার্শ্ববর্তী আড়াইহাজার থানার দুবদাড়া গ্রামে নিরাপদে পৌছে দেন।
সম্মানদী গ্রামে শতাধিক, কোম্পানীগঞ্জে দশটি, সাথীপুরে পাচটি এবং পিরোজপুর গ্রামের সব বাড়িই রাজাকাররা জ্বালিয়ে দিয়ে যায়। জমির কেরানি ও আলাউদ্দিন, এ.এস.এম. সোলায়মানের পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্নিকান্ড, নারী সরবরাহ করত।
এ.এস.এম. সোলায়মানের বিশ্বস্ত অনুচর টেক্কা সামসুর নেতৃত্বে পাকবাহিনী হাতকোপা গ্রামে আক্রমণ করে যুবতী মেয়েদের ধরে আনার জন্য। রাজাকার সামসুর নেতৃত্বে পাকবাহিনী গেম ঢুকলে মেয়েরা পার্শ্ববর্তী পাটক্ষেতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করে।
ভৌগলিক দিক থেকে বন্দর এলাকা হওয়ায় সার্বক্ষনিকভাবে সে অঞ্চল দিয়ে পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরণের নৌকা, ট্রলার, জাহাজ, চলাচল করে। এ.এস.এম. সোলায়মান রাজাকার বাহিনীর মাধ্যমে ওইসব পণ্যবাহী নৌযানের যাবতীয় চাল, ময়দা, চিনি, তেল, সার, চা বিভিন্ন দ্রব্যাদি টাকা পয়সা লুট করত। ব্যবসায়ীরা পণ্য হারিয়ে সম্মানদী গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পে জানায়। এ সংবাদ রাজাকাররা পাকবাহিনীকে জানালে ২০-২৫ জন রাজাকারসহ শ’দুয়েক পাকসেনা সম্মানদী গ্রামে হামলা চালায়। রাজাকাররা যাওয়ার সময় সম্মানদী গ্রামের দুজন মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। মেয়ে দুটি পরবর্তীকালে আর ফিরে আসেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়-
শাহপুর, বানীনাথপুর, জয়রামপুর, ভট্টপুর, বাড়িরঘুভাঙা, রামগঞ্জ ও পঞ্চবটী গ্রামে হিন্দু বসতি বেশি থাকায় রাজাকারদের দৃষ্টি ছিল সেদিকেই। এ.এস.এম. সোলায়মানের সম্মতিতে জমির কেরানি ও সামসুর নেতৃত্বে রাজাকাররা হিন্দু নাগ বংশের যুবতী মেয়ে ও জেলেপাড়ার মেয়েদের ধরে এনে বৈদ্যেরবাজারের পাকবাহিনী ক্যাম্পে সরবরাহ করত।
এছাড়াও সোনারগাঁয়ে এ.এস.এম. সোলায়মান কতৃক রাজাকার বাহিনীর ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গুপ্ত হত্যার বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া গেছে সাক্ষ্য প্রদানকারী স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে।
[১১০] রীতা ভৌমিক

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!