ওয়াপদা পাওয়ার হাউস বধ্যভূমি, পাবনা
বর্বর দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার নজির উদ্ঘাটিত হয়েছে পাবনায়। ওয়াপদার পাওয়ার অফিস প্রাঙ্গণের অভ্যান্তরে বহু কবর খুঁড়ে হাজার হাজার নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে। এই অফিসটিকে পাকবাহিনী তাঁদের সদর দফতর হিসেবেও ব্যবহার করত। আশপাশের এলাকা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে চালানো হতো নানা ধরণের নির্যাতন। তারপর হত্যা এবং মাটি চাপা দিয়ে রাখত এঁদের। এখানে কমপক্ষে ৩ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এঁদের কাপড়-চোপড়, জুতা, চুল প্রভৃতি ইতস্তত ছড়িয়ে ছিল। পাকবাহিনী আত্মসম্পর্নের অব্যবহিত পূর্বেও বহু লোককে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াপদার ঝাড়ুদার ভানুলাল জমাদার। ভানুলাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রকাশ করেছে এই হত্যাকাণ্ডের কাহিনী। ভানুলাল একটা জায়গা দেখিয়ে খুঁড়তে বলল। খোঁড়া হলো। মাটির নিচে ষোলটি লাশ। ভানুলাল এরপর দেখালো একটি দোতলা দালান। দালানের জানালার সমস্ত কাচ কালো রঙ করা। এখানে ধরে নিয়ে আসত বাঙালিদের। চলত নির্যাতন তারপর হত্যা। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কেউ বাদ পড়েনি এঁদের হত্যাযজ্ঞ থেকে। সন্দেহে বহু তরুনকে ধরে এনে হত্যা করা হতো এখানে। পাবনায় সাহায্য ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব আবু সাঈদ এম.সি.এ এই তথ্য পরিবেশন করেন। রূপসীতে যে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়, তাতে প্রায় তিনশ লোকের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। তারা সদর মহকুমায় ৮টি থানার প্রায় ৫০ হাজার ঘড়বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৫৫ হাজার ঘরবাড়ির ধনসম্পদ নষ্ট করেছে। এ পর্যন্ত বেড়া ও ফরিদপুর থানার চার হাজার লোককে হত্যা সম্পর্কে নিশ্চিত রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
[৩৭৭] সংকলন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত