ওয়্যারলেস ও বাহাদুর শাহ কলোনি বধ্যভূমি, চট্টগ্রাম
পাহাড়তলি ওয়্যারলেস কলোনি এলাকায় বধ্যভূমি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে ‘জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস পরিষদ’ – এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী কেন্দ্রের সহকারী হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ শামসুল হকের একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে শামসুল হক সেদিন বলেছিলেন:
১০ নভেম্বর। সেদিনটি ছিল ২০ রমজান। খুব সকাল বেলা পাহাড়তলীর পাঞ্জাবি লাইন, ওয়্যারলেস কলোনি এবং বাহাদুর শাহ কলোনির শিশু, যুবক, যুবতী, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধকে বাসা থেকে জোরপূর্বক ধরে আনে এবং কাউকে কাউকে মিলিটারি অফিসার সাহেব ডাকছে বলে ঢোকা দিয়ে ওয়্যারলেস কলোনির নিকটস্থ পাহাড়ে দল বেঁধে নিয়ে যায়। সেখানে জল্লাদেরা ধারালো অস্ত্র ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকে। আমরা কয়েকজন-আফছার উদ্দিন, আব্দুস সোবহান ও মোহাম্মদ ছাবেদ মিয়া এই হত্যাযজ্ঞ পাহাড়ের জঙ্গল থেকে দেখতে পাই। সেদিন নরঘাতকরা এক এক বারে আনুমানিক দুইশ লোককে হত্যা করে। তাঁদের শরীরের কাপড়্গুলো একত্রিত করে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ১০ নভেম্বর ৩টার সময় একজন সামরিক অফিসারসহ অনেকে ওয়্যারলেস কলোনি দেখতে আসে। আমরা প্রায় ৩শ লোক তাঁদের সাথে উক্ত জায়গায় গিয়ে পৌছাই। হাজার হাজার নারী-পুরুষের লাশ পড়ে আছে। কোথাও কোথাও মৃতদেহগুলো একত্রিত করে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়েছে। নরপশুরা আত্মীয়স্বজনকে লাশ দিতে অস্বীকার করে। পাহাড়ের ওপরে নির্লজ্জ অবস্থায় অনেক যুবতি নারীর দেহ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছুসংখ্যক পাকসেনা এবং বিহারিরাই এই হত্যাযজ্ঞ চালায়।
[১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত