You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.19 | কড়ই কাদিরপুর গ্রাম বধ্যভূমি | জয়পুরহাট - সংগ্রামের নোটবুক

কড়ই কাদিরপুর গ্রাম বধ্যভূমি, জয়পুরহাট

কড়ই কাদিপুর জয়পুরহাট জেলার বৃহত্তম বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে এখানে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায়। গ্রামের মানূষদের বন্দুকের মুখে একত্র করে দুহাত মাটিতে রেখে উপুড় করে ব্রাশ ফায়ার চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা ৩৬১ জনকে হত্যা করে।
জয়পুরহাট সদর থানায় ছোট্ট গ্রাম কড়ই লাগোয়া গ্রাম কাদিরপুর, কিন্তু সাধারনভাবে কড়ই কাদিরপুর বলেই পরিচিত বেশি।
সেদিন ছিল সোমবার (পাঁচবিবি হাটের আগের দিন), ১৯ এপ্রিল ১৯৭১ (৫ বৈশাখ, ১৩৭৮)। সকাল প্রায় ১১টা। কর্মব্যস্ত গ্রামবাসী হঠাত চমকে ওঠে কড়ই গ্রামের পশ্চিম কোনায় ঘরবাড়িতে আগুন এবং বন্দুকের গুলির আকস্মিক শব্দে। গুলির শব্দ ও আগুনের শিখা দেখে আতঙ্কিত নরনারী প্রাণভয়ে দৌড়ে বাড়ির বাইরে বেরুতে গিয়ে দেখে, ছোট্ট গ্রামটিতে ততক্ষনে পাঞ্জাবি সৈন্য আর অবাঙালি বিহারি রাজাকাররা ঘিরে ফেলেছে।
বৈশাখের তপ্তদিনে ততক্ষনে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে আর ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। রাইফেলের মুখে হানাদাররা গ্রামের সকল বয়সের পুরুষ মানুষকে ঠেলে এনে একত্র করে রাস্তাসংলগ্ন ডোমপুকুরের পশ্চিম পাড়ে। এরপর হায়েনারা গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল, কড়ই গ্রামের পালপাড়া এবং কাদিরপুর গ্রামের মিলে এই বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি হানাদাররা ৩৬১ জনকে হত্যা করেছিল। কড়ই গ্রামের পালপাড়ায় হিন্দুদের ভিটেতে বাতি জ্বালাবার মতো এখন কেউ নেই। শূন্য বিরান জনপদ।
গ্রামের মন্ডল বা প্রধান ছিল হলধর পাল, ‘পাঞ্জাবির হুকুমে একজন ছোন (ধারালো অস্ত্রবিশেষ, যা দিয়ে খেজুরের রসের জন্য গাছ কাটা হয়) দিয়ে হলধরকে দু টুকরা করে। ৩৬১ জনকে হত্যার পর ডোমপুকুরের ভাতিতে (পুকুর থেকে জমিতে যাত বা ছেনি দিয়ে জল সেচের জন্য খননকৃত গভীর গর্ত) মাটি-চাপা দেয়া হয়’-২০-২৫টি লাশ একত্র করে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ক্যাদার পুকুর পাড়ের আখেরগুড় তৈরির বিরাট চুল্লিতেও মাটিচাপা দেয়া হয় বহু লাশ।
কাদিরপুর গ্রামের দেবেন পাল অশ্রুভেজা কন্ঠে জানালেন, দাদা, আমার বাড়িতেই মারা গেছে ১৭ জন। লাইনে হত্যার জন্য দাঁড় করানোর পরও ভাগ্যক্রমে দেবেন বেঁচে আছেন। প্রথম বার রাইফেলের গুলির শব্দেই ভয়ে মাটিতে পড়ে গেলে হানাদাররা মৃত ভেবে ফেলে যায়। অর্ধমৃত যারা কাতরাচ্ছিল, পরপর ২-৩ বার গুলি করা হয়, পাঞ্জাবিরা ফটো তোলে মৃতদেহের, তারপর লুটপাট করে চলে যায়।
[৪৩৭] আমিনুল হক বাবুল

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত