You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.24 | উজিরপুর গণহত্যা | বরিশাল - সংগ্রামের নোটবুক

উজিরপুর গণহত্যা, বরিশাল

২৪মে পাকবাহিনী উজিরপুর বন্দর আক্রমণ করে অনেককে হত্যা করে। উপসচিব জ্ঞানরঞ্জন সাহার ৮০ বছর বয়স্ক পিতা তারক চন্দ্র সাহাকে স্ত্রীর সামনে হত্যা করে। ঐদিন হত্যা করেছে বরিশাল বারের উকিল কোটালীপাড়া নিবাসী প্রমথ সেনকে। ১৬ জুন পাকবাহিনী সাতলা আক্রমণ করে কয়েকশ লোক হত্যা করে। পাকবাহিনীর দালাল মাধবপাশা নিবাসী সিরাজ মাওলানাকে মুক্তিবাহিনী ১৮ মে হত্যা করে। প্রতিশোধ নেবার জন্য ২০ মে বরিশাল হতে এক লঞ্চভর্তি পাকসেনা গুঠিয়া পৌছে। তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গুঠিয়া ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে এবং ক্লান্ত হয়ে বরিশাল ফিরে যায়। তারা গুঠিয়া ইউনিয়নের নারায়নপুর, হরিদ্রাপুর, ডহরপাড়া, ভাইটশালী, কাকরধারী, রৈভদ্রদী, চাঙ্গুরিয়া দোসতিনা, বৈরকাটি, নয়াবাড়ি, সালিয়াবাকপুর ইউনিয়নের নরোত্তম্পুর, গাভারামচন্দ্রপুরের দশকাহনিয়া, বামুনের হাট প্রভৃতি গ্রামে বিশ্বের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায় এবং ৭০০ লোক হত্যা করে। একমাত্র গুঠিয়া মাঝি বাড়িতেই ২২ জনকে হত্যা ক্রএ। বরিশাল বারের অ্যাডভোকেট আফছার উদ্দিন ২১ মে নিজ গ্রাম নারায়নপুরে ৮৭টি মৃতদেহ দেখেছিলেন। ১৮ অক্টোবর পাকসেনারা উজিরপুর থানার বরাকোটা, গাজীরপার ও ধামুরায় ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তারা ধামুরা বাজারটিকে পুড়িয়ে দেয়। জুলাই ও অক্টোবর মাসে বাবুগঞ্জ থানায়, চাদপাশা রাকুদিয়া, ব্রাহ্মণদিয়া, কয়াদি ও রহিমগঞ্জে বাড়িঘর পোড়ায় এবং অনেককে হত্যা করে। ১৯৭১ সনের ১৭ জুলাই মুলাদী থানার দারোগা মালেক কাজীরচরের শাহজাহান, হাবীব, আমির হোসেন, মুলাদীর মিজানুর রহমান ও জলিলসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকারের সহায়তার নন্দীর বাজারে গ্রেফতার করে। ওসির নির্দেশে আমির হোসেন হাবীব ও শাহজাহানকে রাত ১২টায় গুলি করে নয়াভাঙ্গুনী নদীতে ফেলে দেয়। মিজানুর রহমান ও জলিল হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গুলি করার সাথে সাথে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা পায়। পিতা জয়নাল আবেদীন মুন্সী পুত্র হাবীবের লাশ আনার জন্য থানায় যায়। লাশ ফেরত দেয়ার বদলে দারোগা রহমান হাবীবের পিতাকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়। শাহজাহান, হাবীব ও আমির হোসেনের লাশ বাজিরচর স্কুলের পেছনে মাটি দেয়া হয়। ২৪ জুলাই মুলাদী থানার পাতাকাটায় পাকসেনারা শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে। ১৪-১৫ নভেম্বর পাকবাহিনী মেহেন্দীগঞ্জ থানার কালিকাপুর গ্রামের অনেককে হত্যা করে।
[১৩৫] সিরাজিউদ্দীন আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত