ইলাশপুর গণহত্যা, সিলেট
সেদিন ছিল ৬ মে। এ দেশীয় দোসরদের যোগসাজশে বালাগঞ্জ উপজেলার তাজপুর বাজারে এলো পাকিস্তানি সেনারা। ঝলমল রোদমাখা সকালে তাজপুর নেমেই তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের অবস্থান জানতে চায় পাঁচপাড়া গ্রামের কনর মিয়ার কাছে। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর অজ্ঞানতা প্রকাশ করতেই গর্জে ওঠে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলো। কনর মিয়া হয়ে গেলেন স্বাধীনতার বলি। পাক হায়েনারা প্রবেশ করে ইলাশপুর গ্রামে। তারপর বাড়ি থেকে পাকড়াও করে তারা সুধীর চক্রবর্তী, বিধুরঞ্জন চক্রবর্তী, মহেশ কুমার পাল, খোকা ধর, দিগেন্দ্র কুমার দাশ ও মনোরঞ্জন দেব। পাকিস্তানি হায়েনারা সমস্ত গ্রামটি পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেয়। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। ইলাশপুর এবং লাল্ককৈলাশের অসংখ্যা নারির ইজ্জত নিয়ে হোলি খেলে পাষন্ডরা।
ইলাশপুরে গণহত্যা সমাপ্ত করে পাকবাহিনী অগ্রসর হয় লালকৈলাশের দিকে। কিন্তু কদিন পর আবার হানা দেয় তারা ইলাশপুরে। এবারও বাড়ি থেকে ধরে আনে নরেন্দ্র কুমান ভট্টাচার্য, দ্বিজেন্দ্র ভট্টাচার্য, মহেন্দ্র দেব, মহেশ মালাকার প্রমুখকে। তাঁদের নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয় রাইফেলের গুলিতে। এভাবে ইলাশপুর এবং তাঁর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে কদিন পরপরই পাকসেনাদের আগমন ঘটতে থাকে। আর প্রতিবারই প্রাণ দিতে হয় কিছু না কিছু বাঙালিকে। ইজ্জত দিতে হয় বহু পল্লীজায়া-জননীকে। এ সময় রবিদাশ গ্রামের রবীন্দ্র বৈদ্য এবং অশ্বিনী বৈদ্যকেও হত্যা করে পাকবাহিনী।
১১ জুন একটি সামরিক জীপ এসে থামে ইলাশপুর গ্রামে। বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এই সংবাদ। ভীত সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী পালিয়ে যান যে যেদিকে পারেন। কিন্তু জীপ থেকে যে তিনজন লোক নামে তারা পাকিস্তানি জল্লাদ নউ, এ দেশীয় দালাল-দোসর। এঁদের মধ্যে ছিল হাফিজ আলী, আব্দুল আহাদ চৌধুরী এবং রুস্তম আলী। এখানে এসে তারা চড়াও হয় সোরাব আলীর বাড়ির ওপর। কিন্তু সোরাব আলীকে না পেয়ে তাঁর এক আত্মীয় মরম আলীকে পাকড়াও করে এবং পরদিন সোরাব আলীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। সোরাব আলীর অবস্থান জানার জন্য পাক পশুরা তাঁর ধৃত সেই আত্মীয়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত