You dont have javascript enabled! Please enable it! আলাইপুর গণহত্যা | বাগেরহাট - সংগ্রামের নোটবুক

আলাইপুর গণহত্যা, বাগেরহাট

যেসব স্থানে রাজাকারেরা হত্যাকাণ্ড ঘটায় তাঁর মধ্যে আর একটা ছিল আলাইপুর। কিংবদন্তি অনুযায়ী আলাউদ্দিন হুসেন শাহের নামে নামাঙ্কিত এ আলাইপুর ছিল একটা বনেদি মুসলমান অধ্যুষিত গ্রাম। এখানে আলাইপুর বাজার নামে একটা বড় বাজার রয়েছে। রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের অন্তর্গত আলাইপুরে যথেষ্ট সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল। বাজারটা আঠারবাকি নদীর তীরে অবস্থিত। আঠারবাকি নদী দিয়ে খুলনা ও তেরখাদার সাথে এর যোগাযোগ রয়েছে। জুলাই মাসের শেষের দিকে রাজাকারদের একটা বড় দল আলাইপুর বাজারে এসে ক্যাম্প স্থাপন করে। এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের অনেকে পূর্বেই ভারতে চলে গিয়েছিল। যারা ছিল তাঁদের অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় রাজাকারেরা এসে এক ভয়াবহ অবস্থায় সৃষ্টি করে। বিনা কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের ধরে ধরে হত্যা করা হতে থাকে। বলা হয় তারা মুক্তিযোদ্ধা। ফলে কারও কিছু বলার ছিলনা। ছিল গণহত্যা চালানোর একটা অজুহাত মাত্র। যেসব নিরীহ ব্যক্তিকে শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে (?) তারা হত্যা করে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কালিপদ পাল, পাগল সমাদ্দার, মতিলাল জমাদ্দার, তারাপদ পাল প্রমুখ। এর মধ্যে কালিপদ পাল ছিলেন কাজদিয়া স্কুলের শিক্ষক। তিনি ছিলেন এ এলাকার একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তারাপদ পাল ছিলেন একজন দিনমজুর। তিনি তাঁর স্ত্রীকে রাজাকারদের প্রস্তাব মতো ক্যাম্পে পাঠাতে চাননি বলেই তাকে তাঁদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। আরও অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের হাতে নিহত হয় যাদের নাম উদ্ধার করা আজ সত্যিই কঠিন ব্যাপার। এত দিন পর প্রায় সবই বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। শুধু হিন্দু নয়, মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেও তাঁদের হাতে নিহত হয়। এর মধ্যে একজন ছিলেন মন্সুরুল হক। তিনি ছিলেন বাহিরদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রথমে তিনি মুসলিম লীগ করতেন। পরে আওয়ামী লীগে চলে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর সমর্থক হয়ে ওঠেন। স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন খুবই প্রতিবাদ মুখর। এ কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রাজাকারেরা তাকে নির্মম্ভাবে হত্যা করে। শুধু তিনি নন, তাঁর শ্যালকও রাজাকারদের হাতে নিহত হন। পরে অবশ্য বাম আদর্শের অনুসারী বাহিরদিয়ার বিপ্লবী নেতা মানস ঘোষ রাজাকার দমনে তৎপর হয়ে উঠলে তাঁদের এ অপতৎপরতা অনেকখানি স্তিমিত হয়ে আসে।
[১১২] শেখ গাউস মিয়া

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত