আলীগঞ্জ সরকারি পাথর ডিপো বধ্যভূমি, নারায়ণগঞ্জ
ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সড়কে আলীগঞ্জ সরকারি পাথর ডিপো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর আরেকটি বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস এখানে অগণিত বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের একজন নীরব প্রত্যক্ষদর্শী এই পাথর ডিপোর চৌকিদার ইয়াকুব আলী হাওলাদার (৭০)। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ২৬ মার্চ, শুক্রুবার পাকবাহিনী পাগলা মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমসহ ৬ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারপর থেকেই ব্যাপকভাবে এই বধ্যভূমিতে বাঙালি নিধন শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা অসংখ্য বাঙালিকে এখানে রাতের অন্ধকারে জবাই করা হতো। তাঁদের হাত মুখ চোখ বাঁধা থাকত। অনেক সময় নিহতদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য তাঁদের লাশ বড় বড় পাথরে বেঁধে পার্শ্ববর্তী জলাশয় ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হতো। এছাড়া অন্যান্য স্থানে নিহত বাঙালিদের লাশও ট্রাকে বোঝাই করে এখানে এনে ফেলা হতো। চৌকিদার ইয়াকুব আলী এই বধ্যভূমিতে কতজন বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে তা বলতে পারেননি। তবে একটি স্থান দেখিয়ে বলেন যে, একদিনেই এখানে ৮০ জনকে হত্যার পর ফেলে রাখা হয়েছিল। সে সময় লাশের স্তূপের পচা গন্ধে ফতুল্লা থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত যাতায়াতকারীদের নামে রুমাল চাপা দিতে হত, বস্তুত রস্তার উভয়পাশে প্রকাশ্যে লাশের স্তূপ রেখে স্বাধীনতাকামী বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করাই ছিল পাকবাহিনীর মূল উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, উপরোক্ত বধ্যভূমির পাশে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জবাইখানা ছিল, যেমন – কবির রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, পাকিস্তান ন্যাশনাল ওয়েল ডিপো, পাগলার কালির ঢিপি, দৌলেশ্বর তেল মিল ও ব্যাকল্যান্ড গভর্নর জেটি।
[৩৭২] রোজিনা কাদের
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত