আলীনগর গণহত্যা, সিলেট
একাত্তরের ১০ এপ্রিল। সিলেট চারখাই রুটের বাস স্টেশন তখন কদমতলিতে-সুরমা নদীর তীরে। সেখানকার কি একটি সাধারণ ঘটনায় পাকিস্তানি আর্মি এসে হস্তক্ষেপ করলে ওই লাইনের গাড়ি চালকরা ভয়ে গাড়ি চালনা বন্ধ করে দেয়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিল হানাদার বাহিনীর দালাল আব্দুর রহিম ওরফে বচন হাজী। গাড়ি চালকদের অবাধ্যতার শাস্তির বিধান করে সে। তৈরি করে তালিকা। আর তাঁদের হত্যা করার জন্যে পাকবাহিনীকে আহ্বান জানায়। পাকসেনারাও সাথে সাথে সাড়া দেয়। এগিয়ে আসে অবাধ্য গাড়ি চালকদের হত্যা করতে। তালিকা মতে, ঐ পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের প্রথম শিকার হন বিয়ানীবাজার থানার আলীনগর ইউনিয়নস্থ কাদিমল্লিক গ্রামের গাড়িচালক আব্দুল হামিদ চৌধুরী। কিন্তু তিনি একা নন। পাশাপাশি একইভাবে হত্যা করা হয় স্কুল ছাত্র আসফাক উদ্দিনকে। টিকরপাড়ার আব্দুল লতিফ তখন ভাতের থালা নিয়ে বসা। খাওয়া শেষ হয়নি তাঁর। এ সময়ই হানাদার বাহিনীর আগমন ঘটে তাঁর বাড়িতে। তাঁদের পথ দেখিয়ে নিয়েযায় ফয়েজ আহমদ নামের একজন দালাল। তারই প্ররোচনায় হত্যা করা হয় আব্দুল লতিফকে। আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল বারিক ওইদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সেনারা তাঁর কাছে জানতে চায় হিন্দুদের অবস্থান সম্পর্কে। তিনি এ ব্যাপারে নিজের অপারগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায় হায়েনাদের হাতের আগ্নেয়াস্ত্রে। একই দিনে পাক জঙ্গি বিমানের শেলিংয়ে প্রাণ দিতে হয় মোহাম্মদপুরের সাইদুর রহমান ও সইয়ব আলী, বরবই গ্রামের সোনা মিয়া ও ঢেলাখাইয়ের রইছ মিয়ার শিশুসন্তানকে।
১২ এপ্রিল পাক হায়েনারা প্রবেশ করে নইরপুর গ্রামে। সেখান থেকে ধরে আনে তারা দুজনকে। ধৃত ব্যক্তিদ্বয় হলেন রুপি নমঃশূদ্র ও নরেশ নমঃশূদ্র। এঁদের দুজনকে কাচি দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। খলা গ্রামের মানিকউদ্দিন ও উত্তর ভাগের মুজাম্মিল আলী শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধে। হাতিটিলায় আর একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে রাজাকার মধু মিয়া। আতিউর রহমান ধরিয়ে দেয় আর এক মুক্তিযোদ্ধাকে। তাকেও হত্যা করা হয় চারখাইয়ের দিকে কোথাও নিয়ে গিয়ে। শহীদ সুবেদার মেজর ছালিক উদ্দিন চৌধুরী, হাবিলদার আব্দুল খালিক চৌধুরী, সিপাহী আরব আলী ও আসাদ আলী ছিলেন এই আলিনগরেরই সন্তান।
[৪৬] তাজুল মোহাম্মদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত