আধুনিক হাসপাতালের পাশে গণকবর, চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘সাউথ ওয়েস্ট কমান্দ’ হেডকোয়ার্টার এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে চুয়াডাঙ্গার ৪ নং উইং ইপিআর, ছাত্র-জনতা জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৌরবজনক ভূমিকা পাকিস্তানিদের হিংস্র করে তুলেছিল। তাছাড়া এ সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে বেশ কিছু সংখ্যক বিহারিও প্রাণ হারায়। তাই পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গা প্রবেশের সময়ে চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ সড়কের পাশের প্রায় সকল বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, যুবতী মেয়েদের করে সম্ভ্রম নষ্ট। শুধু ১৫ ও ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের দশমাইল, শরতগঞ্জ, ডিঙ্গেদহ ও চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানিরা চুয়াডাঙ্গা শহরের ৫০ ভাগ ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং দোকান পাট লুট করে। তাঁদের এই ধ্বংস যজ্ঞের সহায়তা করে বিহারিসহ জামায়াত ও মুসলিম লীগের কতিপয় নেতা-কর্মীরা। তারা রাজাকার বাহিনী গঠন করে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসের (৭ ডিসেম্বর) পূর্ব পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে লুটতরাজ চালিয়ে মা-বোনের ওপর পাশবিক অত্যাচার করে। পাকসেনারা ছাত্র-যুবকদের ধরে নিয়ে এসে কখনো গুলি করে আবার কখনো বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত। এই সমস্ত লাশ পুঁতে রাখা হতো চুয়াডাঙ্গা আধুনিক হাসপাতালের পাশে। স্বাধীনতার পর এখানে পাওয়া গেছে হাজার হাজার মানুষের লাশ ও কঙ্কাল।
[১৩৭] সুকুমার বিশ্বাস
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত