আদমজী জুট মিল নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলের আনসার ক্লাব, ঢাকা বাজু ছিল পাকসেনাদের ক্যাম্প। হানাদাররা আনসার ক্লাবের মাঠের দক্ষিণ পাশে পুকুর পাড়ে বড় কূপ খনন করে লাশ ফেলার জন্যে। যুদ্ধকালীন সময়ে নিরীহ শ্রমিকদের টাকা-পয়সা লুট করে বিহারি রাজাকাররা পাকসেনাদের হাতে তুলে দিত। এই ক্যাম্পে গুলি করে যাদের মারা হয় তাঁদের মৃতদেহগুলো এই কূপে ফেলে দেয়া হতো।
নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, চিটাগাং সড়ক, মিজিমিজি গ্রাম, গোদনাইল থেকে নিরীহ যুবক যুবতীদের জোরপূর্বক টেডিগেট (নিউ কলোনি), ঢাকা বাজুতে ধরে আনত রাজাকার ও হানাদাররা। টেডিগেটের খালের পাড়ে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে। খালের পাশে গর্ত তৈরি করে মৃতদেহগুলো ওইখানে পুঁতে রাখে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে জালকুড়ি গ্রামের কয়েক বাড়িতে পাকসেনারা আগুন ধরিয়ে দেয়। আদমজী মিলের পাওয়ার হাউস বরাবর হানাদার বাহিনীর গাড়ি দেখে আফসার উদ্দীন পাক আর্মিকে গুলি করে। পাক আর্মিরা সাথে সাথে আফসার উদ্দীনকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। সেখানেই সে স্পট ডেথ হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা সস্তাপুর রেললাইন অপারেশন করার পর বর্বর বাহিনীর সস্তাপুর গ্রামবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করে।
নভেম্বর মাসের ২০-২৫ তারিখের দিকে পাকসেনারা বাড়িপাড়া রেললাইন পুলের সামনে লস্কর আলী নামে এক লোককে গুলি করে হত্যা করে।
পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে সেনার পাড়া গ্রামে হামলা চালায়। গ্রামের ৭-৮ মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পাকসেনারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজে।
এক পাক আর্মি জমিলা বেগম নামে এক মহিলার কাছে পানি খেতে চায়। তাঁর সঙ্গীরা তাকে সেখানে রেখে চলে আসে। জমিলা বেগম পাক আর্মিকে পানি খেতে দিয়ে পেছন থেকে তাঁর মাথায় মুশল (ধান ভানার দণ্ড) দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে পাক আর্মিটা মাটিতে পড়ে যায়। মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই জমিলা মুশল দিয়ে আরো কয়েকটা আঘাত করেন। আঘাতের ফলে পাক আর্মিটি সেখানেই মারা যায়। লাশটিকে তিনি খড় দিয়ে ঢেকে রাখেন।
[১১০] রীতা ভৌমিক
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত