আইরখামার গনহত্যা, লালমনিরহাট
৮ নভেম্বর মুজিব বাহিনীর একটি ইউনিট নিয়ে খোন্দকার মোশতাক ইলাহী লালমনিরহাটের অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। রাত্রি যাপনের জন্য বড়বাড়ীর সন্নিকটে আইরখামার গ্রামে যাত্রাবিরতি করে। কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক সংলগ্ন এ গ্রামখানি। গুপ্তচরের চক্রান্তে ৯ নভেম্বর ভোরবেলায় পাকিস্তান বাহিনীর সৈন্যরা গ্রামখানি ঘিরে ফেলে এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫৪ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। নিম্নে ১৮ জন নিহত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলো।
১. খোন্দকার মুখতার ইলাহী (ছাত্রলীগ নেতা ও ভি.পি. কারমাইকেল কলেজ), ২. আব্দুল কাশেম (চেয়ারম্যান বড়বাড়ী ইউনিয়ন), ৩. সাহেরউদ্দিন, ৪. হেকমত আলী, ৫. শফিউদ্দিন (সাইকেল মেকার), ৬. আফতাব উদ্দিন, ৭. দছি মামুদ, ৮. ভোলা মামুদ, ৯. নাড়িয়া মামুদ, ১০. জহির উদ্দিন মামুদ, ১১. ওমর আলী, ১২. ধড় মামুদ, ১৩. আলী আহমেদ, ১৪. তমিজ উদ্দিন, ১৫. মফিজ উদ্দিন, ১৬. গতা মামুদ, ১৭. কেচুয়া মামুদ, ১৮. আব্দুল হামিদ
আইরখামার হত্যাকাণ্ড রংপুরের মুক্তিযুদ্ধে এক তোলপাড় সৃষ্টি করে। কারণ শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য তিস্তা ব্রিজ থেকে গ্রামটি ঘিরে অপারেশন চালায়। এ হত্যাকাণ্ডে নিহত হয় রংপুরের মুক্তিযুদ্ধে এক কৃতিমান সন্তান মুখতার ইলাহী। তৎকালীন কারমাইকেল কলেজ ভি.পি. তখন মুজিব বাহিনীর জেলা কমান্ডার হিসেবে কমান্ডো বাহিনীর নেতৃত্বে দিয়েছিল। তাঁর বড় ভাই মঞ্জুর ইলাহী ফ্রান্স থেকে ডুবোজাহাজ প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে কোচবিহারে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মঞ্জুর ইলাহী ভুরুঙ্গামারী সন্নিকটে সাহেবগঞ্জে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সমরাস্ত্র ভাণ্ডারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর আরেক বড় ভাই মুশতাক ইলাহী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হলের ভিপি ও ছাত্রলীগ কর্মী) ঢাকা থেকে পালিয়ে কোচবিহার হয়ে মুজিবনগরে শেখ মনির বাংলার বানী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন।
এছাড়া আরও জায়গায় বিভিন্ন সময়ে নিহত হন তারা হলেন খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, রেলওয়ে হাসপাতালের ডাক্তার এম. এ. রহমান, গোশাল বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী একলাল মিয়া, নামাটারি গ্রামের আকরাম মিয়া, হাজী অছিরউদ্দিন (নাড্ডা হাজী) রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক হাইস্কুলের শিক্ষক আহসান আহমেদসহ বহু নিরীহ মানুষ।
[৮২] মহাম্মদ মনিরুজ্জামান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত