You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04 | আখিরা বধ্যভূমি | দিনাজপুর - সংগ্রামের নোটবুক

আখিরা বধ্যভূমি, দিনাজপুর

দিনাজপুরে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার স্বাক্ষর ফুলবাড়ি উপজেলার বাড়াই আখিরা গ্রাম। এখানে পড়ে আছে উনেক স্বাধীনচেতা মানুষের দেহাবশেষ। গনহত্যার বড় ধরণের চিহ্ন। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বে মহাসড়কের প্রায় ২০০ গজ অদূরেই আখিরা বধ্যভূমি। প্রত্যন্ত এ গ্রামটিতে এখনো আছে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন। এপ্রিল ’৭১-এর সকাল ১১টায় আখিরা বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। শতাধিক নিরস্ত্র মানুষ। পাক হানাদাররা তাঁদের পাখির মতো নির্বিচারে ব্রাশফায়ার করে মারে। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার হাত থেকে রক্ষা পেতে নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও ফুলবাড়ী এলাকার মানুষ প্রাণভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে ভারতের দিকে পালানোর সময় ঘটে এ ঘটনা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মখলেসুর রহমান, এই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন। মখলেসুর রহমান বাড়াইহাট গ্রামের দলিল উদ্দীনের পুত্র। সে সময় তিনি ছিলেন ৮ বছরের বালক। তাই ঘটনার বর্ননা তেমন তাঁর স্মৃতিতে নেই। সেই দিনই গুলিবিদ্ধ আরেক ব্যক্তি তমিজ উদ্দীন (৭০)। তাঁর স্মৃতিচারনে বলেন, অস্ত্রসজ্জিত পাক হানাদাররা নিরস্ত্র মানুষগুলোকে দুসারিতে দাঁড় করায়। এক সারিতে মহিলা ও শিশু এবং অন্য সারিতে বয়স্ক পুরুষ। পুরুষ সারিটিকে প্রথম ব্রাশফায়ার করে। তারা নিমিষে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। অনেকে গুলি খেয়েই পালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ঋষি তাঁর স্মৃতিচারনে বাড়াই বধ্যভূমি সম্পর্কে আরও জানান, দিনটি ছিল ১১ সেপ্টেম্বর ‘৭১। বাড়াইহাট আখিরা প্রবেশ করতেই দেখি সারি সারি কঙ্কাল করোটি। যেন মানুষের একটি মিছিল। তারা যেন বলছিল ‘আমরা তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রান উতসর্গ করে গেলাম’। আখিরা বধ্যভূমি আজ কালগর্ভে হারিয়ে গেলেও কালের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী।
[৪২৯] শাহ আলম শাহী

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড) – মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত