বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৬শে ডিসেম্বর ১৯৭১
আমেরিকা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়!
২৬ ডিসেম্বর—ইয়াহিয়া চক্রকে বেশ ভালো রকম সাহায্য করার পর নিকসন প্রশাসন যেমন একদিকে প্রকাশ্যে ভূট্টো সায়েবকে সমর্থন করে চলেছেন তেমনি আবার বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং তাঁদের পরিচিত বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। নিকসন প্রশাসনের অভিলাষ, ঢাকা ইসলামাবাদের সঙ্গে সামান্যতম যোগাযোগ অন্তত রাখুক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকা যেন বাণিজ্যিক সংযোগ রক্ষা করতে পারে। এবং এর জন্য কিছুদিনের জন্য অন্তত আইনসম্মত স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
এদিকে শ্রীমতী গান্ধী গত ২৪ ডিসেম্বর আমবালায় সময়মত সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এর থেকে রাশিয়া ও ব্রিটেন বুঝতে পেরেছে বাইরের থেকে ভারতের প্রতি কোন হুমকি এলে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং আমেরিকাই ইচ্ছাকৃতভাবেই রাশিয়াকে হয়ত সেই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবে। রাশিয়া আমেরিকা এবং চীনকে এমনভাবে সতর্ক করে দিয়েছে যে সেখানে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। কিন্তু ব্রিটেন এতটা তিক্ততার সঙ্গে কিছু করেনি যদিও উদ্দেশ্য একই।
বাংলাদেশ এখন বুঝতে পেরেছে এখন দেশে ও বিদেশে সমস্ত মতভেদ ভুলে তাদের দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। তা না হলে ভুট্টো সায়েবের হাতই শুধু শক্ত হবে।
ভুট্টোর সর্বশেষ নরম গরম বা বলা যেতে পারে দুধে জল মেশানো বেতার ভাষণ থেকে বোঝা যায়, তিনি পরলোকগত ইসকানদার মিরজার পর আয়ুব যেমন চেষ্টা করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবেই নিজেই ভাবমূর্তিটি গড়ার চেষ্টা করছেন। ভারতের মতই ব্রিটেনের ভুট্টোর ওপর মোটেই আস্থা নেই। কিছু ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিকরা মনে করেন, তিনি বেশিদিন পশ্চিম পাকিস্তানে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। যতই আমেরিকা সাহায্য করুক বা চীন সমর্থন জানাক।
এদিকে নিকসন প্রশাসনের একটি ক্ষমতাশালী অংশ নাকি ভুট্টোকে চোখ কান বুজে সমর্থন করে যাওয়াটা সুনজরে দেখছেন না।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল