বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৬শে ডিসেম্বর ১৯৭১
ভুট্টোর নয়া খেল
পাকিস্তানের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটে গেল। ১৯৫৮ সনে আয়ুব খান ক্ষমতা দখলের দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের উপর চলেছিল অমানুষিক অত্যাচার ও উৎপীড়ন। মুখ্যত বাংলার জাগ্রত জনসাধারণের কন্ঠ রুদ্ধ করে দেবার উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানে সামরিক শাসন প্রবর্তন করা হয়েছিল। আমেরিকার হাতের পুতুল পাক সরকার স্বাধীন ভাবে কোন দিন কোন নীতি নির্দ্ধারণ করতে পারেনি। পর নির্ভরশীলতাই পাকিস্তানের জন্ম লগ্ন থেকে একমাত্র সম্বল। জঙ্গী আয়ুব একদিন প্রভুকে প্রবাসে পাঠিয়ে নিজে পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা হয়ে উঠলেন। দীর্ঘ দিন ধরে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা স্তব্ধ করে রাখা হল। তারপর জঙ্গী আয়ুবকেও একদিন রাজনীতি থেকে সরে দাড়াতে হল। এল ইয়াহিয়া। বাগাড়ম্বরে পূর্বসুরি আয়ুবের চেয়েও একটু অগ্রণী। বাংলার মানুষের ন্যায্য দাবী ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করে চালালো নির্মম পাশবিক অত্যাচার। যার নজির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ক্ষমতায় মদ মত্ত ইয়াহিয়াকে বাংলাদেশে ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সরে দাঁড়াতে হল। পূর্ব পাকিস্তানের সমাধির উপর জন্ম নিল সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশ নবারুণের রক্তিম আভা নিয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিল। ইয়াহিয়ার বিদায়ের পর এল ভুট্টো। আমেরিকান প্রভু এবং চীনা বন্ধুদের আশীর্বাদ নিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক অধিকর্ত্তা হয়ে তিনি দেখা দিলেন। ভুট্টো নিজে গণতন্ত্রের কথা তারস্বরে ঘোষণা করে চলছে অথচ নিজের কাজের মধ্যে তার কোন চিহ্নই খুজে পাওয়া যাবে না। অবশিষ্ট পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে ভুট্টো নিজের তাঁবেদারদে গভর্ণর করে পাঠালেন।
কোন গণতান্ত্রিক উপায়ে এই নীতি নির্দ্ধারণ করা হয় তা ভুট্টো সাহেব একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? বানরের পিঠে ভাগের ন্যায় ভুট্টো সাহেব মন্ত্রিসভার দপ্তরগুলোও ভাগ করে দিয়েছেন। একবারও কি সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জনসাধারণের অসন্তোষের কথা ভেবে দেখবেন? ভুট্টো চাইছেন বাংলাদেশকে দখল করে কবরগামী পাকিস্তানকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে। অথচ বাস্তবের অমোঘ বিধানে বর্ত্তমান পাকিস্তানও তো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হযে যাবার মুখে। ভুট্টো সাহেব ভেবে দেখেছেন কি সেখানকার সংহতি রক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব হবে কিনা? ভেবেছেন বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনায় বসে বাংলাদেশের মানুষকে হয়তো বিভ্রান্ত করা যাবে কিন্তু ভুট্টোর সে আশায় ছাই। ২৫শে মার্চের পর সব আলোচনা মিটে গেছে।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল