You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
১২ই ডিসেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা
বিশেষ প্রতিনিধি—শ্রীজিষ্ণু দে

ভুটান ও ভারতকর্ত্তৃক স্বীকৃতি ৫৫,১২৬ বর্গমাইল, সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশ, বাংলাদেশের সরকার ঘোষণা করেছেন :
(১) সরকার ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষকে জীবন স্বাধীনতা ও সম্পত্তি সম্পর্কিত অধিকার দিতে প্রতিশ্রুত।
(২) ভাষা, আচার, সামাজিকতা ও ধর্ম সম্বন্ধে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা সংবিধানে প্রতিশ্রুত হবে।
(৩) সমস্ত ব্যক্তিগত অপরাধ বিচার্য ও দন্ডনীয়।
(৪) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত হবে।
(৫) আদালত ও বিচার বিভাগ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন হবে।
(৬) দেশ সকল প্রাপ্তবয়স্ক ভোটে নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। এই সরকার হবে পার্লামেন্টারী—অর্থাৎ সংসদীয়।
(৭) মানুষ গণতন্ত্রকামী এবং এই দেশে বহু অত্যাচারের বিরুদ্ধে এরা প্রাচ্যনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়েছে।
(৮) বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক। যতক্ষণ না সকলের স্বাচ্ছন্দ্য আসছে ততক্ষণ কারোর প্রাচুর্য সহ্য করা হবে না।
(৯) পাটব্যবসা জাতীয়করণ করা হবে।
(১০) বাংলাদেশ শিল্পে অনুন্নত ও একচেটিয়া পুঁজির দিকে এর ঝোঁক। এই ঝোঁক কাটিয়ে উঠে শিল্পউন্নয়ন পুঁজি ও পুঁজিদ্রব্য সমবিতরণের দিকে ঝোঁক রেখে কাজ করা হবে।
(১১) কুটীরশিল্প হবে এদেশের শিল্পের খুঁটি। একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে বড় বড় শিল্প।
(১২) শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লাভ ও পুঁজির শেয়ার শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
(১৩) বিজ্ঞানের সাহায্যে কৃষি-উন্নয়ন এই কৃষিপ্রধান দেশের সরকারের বিশেষ লক্ষ্য।
(১৪) জমিদারী প্রথা দেশে নেই। কিন্তু জমি বিলিবন্টন ব্যবস্থা-নিয়ন্ত্রণ সরকারের সামনে এক সমস্যা—সরকার এ সম্বন্ধে অবহিত।
(১৫) ২৫ বিঘা (৮ একর) অবধি জমি নিষ্কর।
(১৬) সরকারী খাসজমি জমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
(১৭) “জমি, যে চাষ করবে তার” এই হল সরকারের জমি বিলির মূল মন্ত্র।
(১৮) দেশের কৃষ্টি হল কবি, সাহিত্যিক, গ্রাম্য শিল্পী ও বুদ্ধিজীবিদের সৃষ্ট বাংলা কৃষ্টি।
(১৯) প্রকৃতির প্রাচুর্য্য এই দেশে মানুষের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং নদনদীর সুরে সুরে বাঁধা গান তাদের নাড়া দেয়।
(২০) সকলের প্রতি সৌহার্দ্য এবং কোনো দেশের প্রতি হিংসার অভাবই বাংলা দেশ সরকারের প্রধান বৈদেশিক মূলমন্ত্র।
(২১) সাম্রাজ্যবাদ, নয়া সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সোচ্চার।

উপরোক্ত ঘোষণাবলী ১২ই ডিসেম্বরে প্রকাশিতব্য দিল্লীর “নিউ ওএভ” কাগজ থেকে গৃহীত। এই কাগজ “নতুন ঢেউ” নাম দিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি চারপাতা বাংলা কাগজ বার করবেন। প্রথম সংখ্যায় ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলা হস্তাক্ষরে লিখিত শুভেচ্ছাসহ এই কাগজ বেরোবে বিপ্লবী বাংলাদেশের পশ্চিমবঙ্গের বন্ধুদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!