সােনার বাংলার যাত্রা হলাে মুজিবনগরের
আম্রকুঞ্জে বাংলার লুপ্ত গৌরবের পুনরুদ্ধার
শত শত কণ্ঠের সােচ্চারিত মহামন্ত্রে অভিষিক্ত হলাে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা সরকার
আগরতলা, ১৭ এপ্রিল ‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালােবাসি’ শত কণ্ঠের সঙ্গীত মুখর মহামন্ত্রে আজ ঘােষিত হলাে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলা সরকারের প্রথম সনদ। ঘােষণা করলেন নবগঠিত সরকারের উপরাষ্ট্রপতি মি. নজরুল ইসলাম। পাঠ করলেন সরকারি উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের জনৈক এম. এন. এ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশ-বিদেশের শত শত সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রধানমন্ত্রী মি. তাজুদ্দিন আহাম্মদ।
বাংলার উত্তর খণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন মুজিব নগরের আম্রকুঞ্জে আজ সকালবেলায় স্বাধীন বাংলা সরকারের স্বাধীনতার সনদ ঘােষণা করেন উপরাষ্ট্রপতি মি. নজরুল ইসলাম। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করেন নবগঠিত সরকারের কার্যক্রম। সাহায্য প্রার্থনা করলেন বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে আবেদন জানালেন স্বীকৃতির জন্য।
এই পবিত্র অনুষ্ঠানেই উপরাষ্ট্রপতি মি. ইসলাম বাংলা সরকারের প্রধান সেনাপতি পদে কর্নেল উসমানীর পরিচয় করিয়ে দেন। এই রণ বিশারদ বাঙালি কর্নেলকে আয়ুব পদচ্যুত করেছিলেন। তিনি দেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য আত্মবলি দানের শপথ গ্রহণ করেন। কর্নেল উসমানী অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে জানান, প্রয়ােজন হলে এ যুদ্ধ বিশ বছর চলবে। কারণ এই সংগ্রাম স্বাধীনতার এ যুদ্ধ মুক্তির।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি সুস্থ এবং নিরাপদেই আছেন। রাজনৈতিক কারণে আত্মগােপন করেছেন। কিন্তু তারই নির্দেশে নবগঠিত সরকার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেই তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার পরিত্যাগ করবেন বলে মি. ইসলাম জানান।
উপরাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার সনদ ঘােষণার প্রারম্ভে অত্যন্ত আবেগ মহিত কণ্ঠে বলেন যে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকুঞ্জে একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল আজ আবার সেই লুপ্ত গৌরব বাংলারই মাটিতে রক্ত স্রোতের মধ্যে রক্ত লেখায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলাে।
সূত্র: গণসংহতি
১৮ এপ্রিল, ১৯৭১