You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.28 | রাজনীতির হেরফের —কষ্টিপাথর | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৮ নভেম্বর ১৯৭১

রাজনীতির হেরফের
—কষ্টিপাথর

নির্মম ভাবে শোষিত হয়েছে, কঠোর ভাবে শাসিত হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই। বৃটিশ ভারতের সাম্রাজ্যবাদপুষ্ট একশ্রেণীর মুসলমান, সামন্ত, ধনপতি শিল্পপতি প্রভৃতি সমন্বয়ে গঠিত কায়েমীস্বার্থবাদী গোষ্ঠির অবাধ শাসন শোষণের ষড়যন্ত্রের আঁতুর ঘরে জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের। তারা তাদের শ্রেণী স্বার্থের তাগিদে ধর্মীয় ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চেয়েছিল পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ। প্রকৃত সত্যকে উপেক্ষা করেছিল যে পাকিস্তান একটি বহুজাতি বিশিষ্ট দেশ; আর পাকিস্তানের দুই অংশের মানুষের সমাজগত ও শ্রেণীগত অবস্থানের মধ্যে গভীর পার্থক্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল। ফলে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর তথাকথিত পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদী নীতি কার্য্যকরীকরণের প্রতি পদক্ষেপে বাঙালী সমাজ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সংঘাতের সৃষ্টি করে। এই সংঘাত জনিত সংগ্রামে প্রাথমিক পর্য্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশের বিকাশমান মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবি সমাজ।
বাঙালী জাতীয়তাবোধ বা জাতীয়তাবাদের ধ্যান ধারণা তখন তাদের অবচেতন মনেই অবস্থান করত। কিন্তু পরবর্তীকালে বাংলাদেশ যখন উঠতি বাঙালী ধনিক-বনিক শ্রেণীর উদ্ভব হয় তখন তারা এ সংগ্রামকে সচেতনভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়; আর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সকল শ্রেণীকে “মুক্তির” ডাক দিয়ে এ সংগ্রামে জড়িয়ে ফেলে। বাংলাদেশের মুক্তি পাগল সাধারণ মানুষ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে জয়যুক্ত করে। কিন্তু নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে মুক্তিপথে পা বাড়ান সম্ভব হয়নি। পরন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের জনতার উপর হেনেছে সশস্ত্র আঘাত। উড়িয়ে দিয়েছে জনপদ, ঘরবাড়ী, লুন্ঠন করেছে ধনমান ঐশ্বর্য্য, আগুনে আর রক্তে লাল করে দিয়েছে বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ, বাংলার প্রকৃতি। তবু বাংলার মানুষ দমেনি। সে চায় স্বাধীনতা, সে চায় মুক্তির স্বাদ। তাই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে—পাগল হয়ে খুঁজেছে অস্ত্র, অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের মোকাবিলা করতে। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে এল বৈপ্লবিক রূপান্তর, বৈপ্লবিক চেতনা। তাই সেদিনের বাঙালী আর আজকের সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত বাঙালী এক বাঙালী নয়। ভিটে ছাড়া মাটি পোড়া আপনজন হারা অন্নহীন বস্ত্রহীন ক্লীষ্ট প্রাণ বাঙালী আজ এক সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত—মুক্তি তার চাই-ই যে মুক্তি দেবে তাকে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার সব উপকরণ, সব অধিকার।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল