বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ নভেম্বর ১৯৭১
রক্তমত্ত বাংলাদেশ-ঈদের চাঁদ রক্তের সমুদ্রে
এবারের ঈদ রক্ততিলক শপথের দিন
অনেক স্মৃতির স্বাক্ষর নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গেল একটা বছর। এল আবার ঈদ। খুশীর ঈদ। আনন্দের ঈদ। মিলনের ঈদ। একটা মাসের সংযমের অগ্নিপরীক্ষার পর আসে আমাদের জীবনে এই পবিত্র দিনটি; তাই পবিত্র দিনটিকে আমরা স্বাগত জানাই পবিত্র মনে।
প্রতি বছরের মত এবারও বাংলাদেশে ঈদ এসেছে। কিন্তু আসেনি আনন্দ। ওঠেনি খুশীর ঢেউ। বাজেনি মিলনের বাঁশী। বাংলাদেশে যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে শতশিখা বিস্তার করে। বাংলার তরুণশক্তি যে আজ দুর্বার-দুর্জয় স্বৈরাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে।
বাংলার দামাল ছেলেগুলো আজ ঘর ছাড়া। আত্মীয় স্বজন থেকে দূরে বন থেকে বনান্তরে অস্ত্র হাতে ঘুরছে শত্রু হননের প্রতিজ্ঞা নিয়ে। তাইতো বাংলাদেশে এবার খুশীর বান ডাকেনি। এবারে বাংলার তরুণ শক্তির প্রতিজ্ঞা যে চাঁদ রক্তের সমুদ্রে হারিয়ে গেছে সে চাঁদকে মুক্ত করে তবেই তারা ঈদের উৎসব পালন করবে। তাই আজকের এই দিন শপথের দিন। আজ বাংলা দেশের মায়ের চোখে অশ্রু। বোনের চোখে অশ্রু। বাবার চোখে অশ্রু। এবারের ঈদে বাংলাদেশের মায়ের পাশে ছেলে নেই। পিতার পাশে সন্তান নেই। বোনের পাশে ভাই নেই। আজকে মা-বাবার আদরের সন্তান, বোনের স্নেহের ভাই, প্রতিবাদের রণাঙ্গনে। তাই বাংলার মা-বাবা আর বোনের এবারের ঈদের জামাতে খোদার কাছে প্রার্থনা হবে, “হে খোদা, যারা ১৫ লক্ষ মানুষকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার কোর। বাংলাকে মুক্ত কোর। আর যারা বাংলার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে তাদের আশীর্বাদ কোর। সেই হবে এবারের ঈদের প্রার্থনা।”
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল