বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ নভেম্বর ১৯৭১
সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
দেশে দেশে সশস্ত্র মুক্তির সংগ্রাম
—অধ্যাপিকা রেহানা বেগম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
অথচ ফিদেল বা তার দলবল কেউই কমিউনিস্ট দলভুক্ত ছিলনা। সম্ভবতঃ এই প্রথম একটা দেশে এই ধরণের একটা বিপ্লব হল যা কমিউনিস্ট দলের উদ্যোগে বা নেতৃত্বে হয়নি। বরঞ্চ প্রথমদিকে কমিউনিস্ট পার্টি এদের হঠকারী বলে সমর্থনও করেনি। পরে অবশ্য বিপ্লবীদলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়েছিল। আসলে এরা কোন দল বা গোষ্ঠীভুক্ত নয়—এরা সার্ত্রের ভাষায় “যা করা দরকার তাই করেছিল” (“to do what needs to be done—Sartre.”)
বিপ্লবী দেশের যে কাজগুলো বিশেষ করে উল্লেখ করা যেতে পারে তা হ’ল :-
(ক) চাষীর হাতে জমি দেওয়া এবং সমবায় ভিত্তিতে ও যৌথভাবে চাষ করা।
(খ) চিনি শিল্পের জাতীয়করণ।
(গ) নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা।
(ঘ) খাবার ও বাসস্থানের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ও স্বাচ্ছন্দ্য আসয়ন।
(ঙ) সব মানুষের জীবনে প্রকৃত স্বাধীনতার আস্বাদ।
এগুলো সেই সব জিনিষ যা মানুষের জীবনে পরম কাম্য। কৃষক দিবারাত্র পরিশ্রম করে, জমির মুনাফা লোটে জমিদার। এই অদ্ভুত ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন সরকার তার বিপ্লবের কাজ কর্ম শুরু করল। শুধু কৃষককে জমির অধিকার দেওয়া নয়, সরাসরি যৌথভাবে সমবায় ভিত্তিতে চাষ করার প্রস্তাব পাশ করিয়ে ফিদেল বিপ্লবের সাফল্যই প্রকাশ করলেন। এই কাজের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের রাজনৈতিক ভিত্তি পাকা হল, চাষের দ্রুত দ্রুত শিল্পায়নের পথে গেল।
চিনি শিল্প যার থেকে বিদেশীরা কোটি কোটি ডলার মুনাফা লুটত, তার জাতীয়করণ করে ফিদেল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও দেশকে স্বনির্ভর করার সাহসী পদক্ষেপ করলেন। কাজ করার ক্ষমতা আছে অথচ বেকার—এদের কাজকর্মের ব্যবস্থা করে সমাজের অশান্তির মুলোৎপাটন করার চেষ্টা হল।
কাস্ত্রো জয়লাভের তিনদিনের মধ্যে সমস্ত মানুষকে যার যার কাজে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন আমাদের সামনে দায়িত্ব আজ বিরাট, নতুন সুখী কিউবা গড়ার। আজ অনেক, অনেক বেশী দায়িত্বশীল হতে হবে সবাইকে। কারণ, নতুন কিউবার গড়বো আমরা সবাই মিলে।
ছাত্রদের উপর দায়িত্ব ছিল নিজের পড়াশুনার অবসরে এবং ছুটিতে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে গিয়ে লেখাপড়া লেখাপড়া শেখাতে হবে। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে না পারলে মানুষ তার অধিকার কোনদিনই রক্ষা করতে পারবে না। বিপ্লবের ১০/১২ বছরের মধ্যে কিউবা এ সমস্যার সমাধান করেছে।
কৃষি সমবায় ও শিল্পাঞ্চলের কৃষক শ্রমিকের বাস্তু ভেঙ্গে গড়ে উঠল সুন্দর স্বাস্থ্যকর বাসস্থান আর তার পাশে পাশে স্কুল বাড়ী হাসপাতাল তৈরী হল। বাচ্চারা কতদিন পর দুধ খেতে পেল।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের কিউবাস্থিত প্রতিনিধি R. Hart Phillips বলেছেন :- ‘অ্যাডালবার্টো (Adalberto) নামে একটি ১৪ বছরের ছেলে যাকে দেখে ১০ বছরের বেশী মনে হয় না, সে খুব গর্বের সঙ্গে বলছিল যে, সে গত ৬ মাসের ২০ পাউন্ড ওজন বাড়িয়েছে। তার ভাই-বোনেরা ৩ জনও অনেক বেড়েছে। (চলবে)
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল