বিপ্লবী বাংলাদেশ
১৪ নভেম্বর ১৯৭১
বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে
অপরাজেয় মুক্তিবাহিনী এগিয়ে চলছে
১২ই নভেম্বর, বাংলাদেশ—অপরাজেয় মুক্তিবাহিনীর গতি আজ দুর্বার দুর্জয়। মুক্তিসেনাদের জয় সুনিশ্চিত এবং ত্বরান্বিত। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকদিনের সাফল্যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ থেকে হানাদার বাহিনীর লেজ গুটিয়ে পালাবার সময় আর বেশী দূরে নয়। বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখে বাংলার বিপ্লবীদের উপর; আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার নির্যাতিত মানুষ আস্থা রাখে বিপ্লবীসেনারা অচিরেই মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে। বিপ্লবীরা জননী জন্মভূমির দিগন্ত থেকে কালো মেঘ দূরীভূত করবে। স্বাধীনতার সূর্য আবার বাংলার মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যাবে। বাংলার নির্যাতিত মানুষের আস্থার মূলে রয়েছে মাত্র পনেরো দিনের সাফল্যের সূচী। মাত্র পনেরো দিনে মুক্তিবাহিনী বিরাট সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মুক্ত। এই সমস্ত মুক্ত এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কার্য পরিচালনাও শুরু হয়েছে।
এই সমস্ত মুক্ত এলাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীর ফেণী, সিলেটের ছাতক, কুষ্ঠিয়ার মেহেরপুর এবং ঢাকার পুরানা শহর। ঢাকার পুরানা শহর অসম সাহসী মুক্তিসেনারা হানাদার বিতাড়িত করে অবরোধ করে রেখেছে। এখানে জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুক্তিসেনাদের সহায়তা করে যাচ্ছে। তাছাড়া টাঙ্গাইল শহরটি অনেক আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত করে রেখেছে। এছাড়াও খুলনা, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড মারের মুখে আজ প্রতিটি রণাঙ্গন থেকে হানাদার পশু সৈন্যরা কুকুরের মত মরছে না হয় প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছে, নচেৎ আত্মসমর্পণ করছে। অতএব দুর্বার দুর্জয় বীর বিপ্লবীদের কে রুখতে পারে! এ বিশ্বাসের সূত্র ধরেই বাংলার মানুষ আজ মুক্তিবাহিনীর জয় অতি শীঘ্রই হবে বলে নিশ্চিত ধারণা করেছে।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল