You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২৫শে সেপ্টেম্বর, বুধবার, ৯ই আশ্বিন, ১৩৮০

ক্ষমতায় পেরন

ক’মাস আগে সামরিক শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য আর্জেন্টিনায় যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে নির্বাচনে পেরন পন্থী জাস্টিসিয়ালিষ্ট পার্টির স্লোগান ছিল ‘প্রেসিডেন্ট পদে ক্যাম্পোরা, ক্ষমতায় পেরন’। জনসাধারণ এর স্বপক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসে। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন জাস্টিসিয়ালিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী হেক্টর ক্যাম্পোরা। আঠারো বৎসরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। প্রগতির লক্ষ্য সামনে রেখে ল্যাটিন আমেরিকার আরেকটি দেশের জয়যাত্রা শুরু হল।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনুসারেই প্রেসিডেন্ট হেক্টর ক্যাম্পোরার সামনে যেটা মূখ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল তার নির্বাসন থেকে জুয়ান পেরণকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনা এবং জনসাধারণের ইচ্ছের মর্যাদা দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। তিনি তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেছেন। পেরণের অনুকূলে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচন দিয়েছেন। সে নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্জেন্টিনার এককালীন একনায়ক জুয়ান পেরণ শতকরা সাতান্নভাগ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার জুয়ান পেরণের পালা। আঠার বৎসর সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হবার পর আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাদেরই এককালীন একনায়ক এবং সংস্কারবাদী নেতা পেরনকে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন তাদের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দেয়ার দায়িত্ব এবার স্বয়ং পেনেরই। নির্বাচনের পূর্বে তিনি নিজেও বলেছেন, আর্জেন্টিনায় তিনি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক বিকাশের প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। জনসাধারণের দারিদ্র্য দূরীকরণে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।
সাতাত্তুর বছর বয়স্ক জেনারেল তার দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে সময় পাবেন তার যথাযথ ব্যবহার কতটুকু করতে তিনি সক্ষম হবেন তা ভবিষ্যতই বলতে পারে। ইতিমধ্যে তার পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং কোন্দলের যে সকল খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তা জনসাধারণের প্রগতিশীল কর্মধারাকেই ব্যাহত করবে। সামরিক জান্তার নির্বাচন দিলেও চূড়ান্তভাবে যে তারা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে ব্যারাকে অবস্থান করবে ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। অনৈক্য এবং বিভেদ সৃষ্টি বিশেষ করে প্রগতিশীল শক্তিগুলোর মধ্যে কোন প্রকার সমঝোতা গড়ে উঠার বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নিয়তই সক্রিয় থাকবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিলিতে একটা দক্ষিণপন্থী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে যাবার পর সে দেশের অধিকাংশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে যে দেশের অবস্থান সেই আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতির গুরুত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে। এ গুরুত্ব যেমন রয়েছে বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার কাছে তেমনি রয়েছে চিলিসহ মুক্তিকামী বিশ্বের মানুষের কাছে। জুয়ান পেরন কি ভূমিকা গ্রহণ করেন সারা বিশ্বের মানুষ এখন সাগ্রহে সেদিকেই দৃষ্টি রাখবে।

নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন বাড়াতে হবে

খুলনায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র নিউজপ্রিন্ট মিলের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। এই মিলে ’৭২-’৭৩ সালের উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৯ হাজার টন অথচ এই দেশ স্বাধীন হবার আগে, এক বছরে সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টন নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।
এই উৎপাদন কম হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তারমধ্যে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবই অন্যতম। এই মিলে মোট তিনটি মেশিন আছে। বিদ্যুতের অভাবে মাত্র দেড় খানা মেশিনে কাজ হচ্ছে বাকিগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, যখন প্রথম চালু করা হয় তখন এর বয়লারে প্রতি ঘণ্টায় এক লাখ তাপশক্তি উৎপাদিত হতো। কিন্তু ১৯৬৪ সালে যখন মিলটিকে সম্প্রসারিত করা হয়, তখন বয়লার বাড়ানো হয়নি। শুধুমাত্র একটি টারবাইন সংযোজন করে প্রতি ঘন্টায় এক লাখের জায়গায় এক লাখ চব্বিশ হাজার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুরু হয়। তাতে বয়লারের উপর অত্যধিক চাপ পড়তে থাকে এবং মাত্র পাঁচ বছর পর থেকেই বয়লারে নানা গোলযোগ দেখা দিতে থাকে। তখন তৃতীয় একটি বয়লার স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অতঃপর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের বিপর্যয়ে তৃতীয় বয়লারটি আর স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, বয়লার তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সময় সাপেক্ষ। অতএব সেই অজুহাতে উৎপাদন মাত্রা কমিয়ে জাতীয় বিপর্যয়কে আরো ঘনীভূত করার সময় এটা নয়। এখন অতিসত্ত্বর দেশের স্বার্থ সামনে রেখে একটা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, গোয়ালপাড়ার ৬০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে পুনরায় চালু করে সেখান থেকে ব্যবস্থাধীনে জন্য জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে পারলে মিলটিতে পূর্ণ উৎপাদন করা সম্ভব।
আমরা জানি যে, আজ নিউজপ্রিন্টের বিশ্বজোড়া সংকট। নিউজপ্রিন্টের অভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারত বর্ষ রীতিমতো গভীর সংকটের সম্মুখীন। বিদেশ থেকে আমদানি করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভারতে চাহিদামাফিক নিউজপ্রিন্ট আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় যদি আমাদের নিউজপ্রিন্ট উৎপাদনে হ্রাস পায় তাহলে যে সংকট দেখা দিবে তা অবর্ণনীয়। কেননা, নিউজপ্রিন্ট আমদানি করার মতো বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করার মত ক্ষমতা আমার নেই। এমনিতে আমাদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
আমরা মনে করি নিউজপ্রিন্ট মিলের যে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, তাতে পূর্ণ উৎপাদন হলে, দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে নিউজপ্রিন্ট রপ্তানি করা যাবে এবং তার দ্বারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।
পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় বাংলাদেশে যে নিউজপ্রিন্ট মিল আছে সেজন্য আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, তার আনুপাতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে আমরা মোটেও অবহিত নই। তাই এই মিলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে তার দ্বারা মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাকেও ঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারিনা।
প্রকৃত কথা হ’ল শুধু কাজ করলে চলে না, কাজের গুরুত্ব ও তাগিদও বুঝতে হয়। কোন কোন ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের জরুরি পদক্ষেপও নিতে হয়, বিশেষ করে তা যদি জাতীয় বিপর্যয় হুমকিস্বরুপ হয়।
একদিকে নিউজপ্রিন্ট মিলে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ছে। এদিকে গণ-অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।এই উভয়বিধ সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে হলে যেকোনো মূল্যে আজ নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন বাড়াতে হবে এই হল আমাদের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আবার শিশুখাদ্যের দাম বাড়ছে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব খানেই আবার ‘বাজারেতে আগুন কেবল বাড়ছে’ অবস্থার উদ্ভব হচ্ছে দাম বাড়ছে চালের, ডালের, মাছের এবং তরিতরকারির। দাম বাড়ছে তেলের। প্রায় সকল রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের। ঋতু পরিক্রমায় তথা মাসের পরিক্রমায় বাংলার ঋতুতে এখন আশ্বিন মাস। আশ্বিন মাসটা এ দেশের জন্য সবসময়ই আকালের মাস। প্রতি বছরই আশ্বিন মাসে একদিকে ভ্যাপসা গরম আরেকদিকে বাজারের গরমে এদেশের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ই। তবে এবারকার আশ্বিনের গরমটা যেন একটু বেশি করেই উত্তাপ ছড়াবে। বাজারের অবস্থা দেখে তা-ই কিন্তু মনে হয়।
বাজারের এই গরম অবস্থা যতখানি স্বাভাবিক তার বেশিটা কিন্তু কৃত্রিম। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই এই কৃত্রিমতার সৃষ্টি করে -সংকটের আবর্তে দেশের মানুষকে হাবুডুবু খাওয়ায়। বর্গীর মত নিরন্ন দেশবাসীর মুখের আহার কেড়ে নিতে দ্বিধা বোধ করে না। অথচ এ বর্গীদের কার্যকরীভাবে দমন করার বাস্তব ও সঠিক কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত যথাযথভাবে নেওয়া হয়েছে এমন কথাও সঠিকভাবে বলা যায় না। বরং বলা যায়, এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা দারুণভাবে লজ্জাজনক। বাজারের অন্যান্য জিনিসের সাথে তাল মিলিয়ে শিশুখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্যও আবার অসাধু ব্যবসায়ী তথা চক্রান্তকারীরা চক্রান্তের নতুন বেড়াজাল ফাঁদতে শুরু করেছে। চক্রান্ত শুরু করেছেন মাসুম বাচ্চাদের মুখের আহার কেড়ে নিতে। হঠাৎ করে শিশুখাদ্যের এই মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত কিন্তু দেশবাসীকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করছে -হতাশ করছে। জানা গেছে বাজারে অবর্তমানে বেবীলাক বিয়াল্লিশ টাকা, মোরিনাগা বারো টাকা, কাউ এন্ড গোট (আড়াই পাউন্ড) পঁয়ত্রিশ টাকা, ডানো (পাঁচ পাউন্ড) সাতচল্লিশ টাকা, ভিভা আঠারো টাকা, মলি পঁয়তাল্লিশ টাকা, ইংল্যান্ডের তৈরি হরলিক্স পঁচিশ টাকা ও লন্ডনে তৈরি গ্লুকোজ চৌদ্দ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রায় প্রতিটি আইটেমে মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ কমপক্ষে পাঁচ টাকা এবং কোন কোনটির ক্ষেত্রে দশ টাকা অবধি গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এহেন মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে সরকারি মহলের কোনো বক্তব্য এখনো শোনা যায়নি। বহির বাণিজ্যমন্ত্রণালয় কিছুই বলেননি। মার্কেটিং বিভাগ তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিশনেরও কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। তবে কি সবাই বেমালুমভাবে চুপচাপ থেকে জনগণকে এহেন নৈরাজ্য আর চক্রান্তের হাতে তুলে দিচ্ছেন? আমরা আশা করব, শিগগিরই এর একটা বিহিত করা হবে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!