বিপ্লবী বাংলাদেশ
১০ অক্টোবর ১৯৭১
বাংলার আকাশে বাতাসে মুক্তিবাহিনীর জয়ধ্বনি
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম :
গত ২রা অক্টোবর—চম্পলনগরের সন্নিকটে মুক্তিবাহিনীর মারমুখী সংগ্রামে ২ জন পাক সেনা খতম হয়। এই অঞ্চলে এক আক্রমণে পাঁচজন পাক হানাদার বাহিনী নিহত হয়।
চলতি মাসের প্রথম দিকে পাক বাহিনীর সৈন্য বোঝাই একটি জীপ কুমিল্লায় মুক্তি যোদ্ধাদের আক্রমণে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায় এই গাড়ীর যাত্রী একজন পাক অফিসারসহ বেশ কয়েকজন পাক সৈন্য নিহত হয়।
খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া :
মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা মাদনা অঞ্চলে চারজন হানাদার বাহিনীকে খতম করে এবং অপর দু জনকে আহত করে। মুক্তিবাহিনীর অপর এক গ্রেনেড আক্রমণে দত্তসনগরের হানাদার বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং একজন হানাদার নিহত হয়।
৩রা অক্টোবর গয়েশপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণে পাঁচজন পাক হানাদার সৈন্য নিহত এবং চারজন গুরুতরভাবে আহত হয়। ঐদিনই চাঁদপুর অঞ্চলে সাতজন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে ভীত সশস্ত্র হয়ে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।
অপর এক সংবাদে প্রকাশ :- মাদরা অঞ্চলে ২রা অক্টোবর মুক্তি বাহিনীর দুঃসাহসিক সৈনিকদের প্রবল আক্রমণে ছয়জন পাক সেনা খতম হয়।
গত ৫ই অক্টোবর বেরিলবাড়ীর ৩৫ জন পাক হানাদার খতম হয় এবং চারজন গুরুতররূপে আহত হয়। ঐ দিনই মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতায় বকশা ও বেলিয়াডাঙ্গার মধ্যেকার টেলিফোন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বেতকারির সন্নিকটে পাক বাহিনীর একটি জীপ মুক্তি যোদ্ধাদের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায়।
বরিশাল :
গত সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি বাহিনী উজিরপুর থানা আক্রমণ করে ৭ জন রাজাকার, ২ জন পাক সেনা এবং ২ জন পুলিশকে হত্যা করে এবং উক্ত স্থান থেকে কিছু রাইফেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী পুনরায় উক্ত থানা আক্রমণ করে ১৭ জন রাজাকার, ৪ জন পাকসেনা, ৩ জন মিলিশিয়া ও ২ জন পুলিশকে হত্যা করে। পরে উক্ত এলাকার বেশ কিছুসংখ্যক রাজাকার রাইফেল সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। উক্ত থানার প্রায় স্থানেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়।
মুক্তিবাহিনী মুলাদী থানা আক্রমণ করে ১৯ জন পাক সেনা খতম করে এবং ৪টি চায়না রাইফেলসহ মোট ১৩টি রাইফেল উদ্ধার করে। এই খন্ড যুদ্ধে বাকী পাক সেনারা উক্ত স্থান থেকে ভয়ে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বানরিপাড়া থানা আক্রমণ চালিয়ে ৮৬ জন রাজাকার, একজন নায়কসহ ১৭ জন পাঞ্জাবী সেনা, ১৩ জন মিলিশিয়া ও ৬ জন পুলিশকে হত্যা করে। এছাড়া সামরিক বাহিনীর একখানা লঞ্চ ধ্বংস করে দেয় এবং একখানা লঞ্চ দখল করতে সমর্থ হয়।
খুলনা :
পাক বাহিনী একখানা গানবোট এবং পাঁচখানা লঞ্চ বোঝাই সৈন্যসহ শ্যামনগর থানায় কৈখালী নামক স্থানে গমন করলে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। ফলে পাক হানাদার বাহিনীর লঞ্চসমূহের প্রচুর ক্ষতি হয়। ফলে শত্রুসৈন্য ওখান থেকে পালিয়ে যায়।
একদল মুক্তিযোদ্ধা গত ২৬ সেপ্টেম্বর বসন্তপুরের পাক ঘাঁটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলতে সক্ষম হয়েছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বরে কালিগঞ্জের পিরোজপুরে এক সম্মুখ যুদ্ধে ২০ পাকসেনা ও ৪০ জন রাজাকার খতম হয়েছে। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে। এখানের যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। এছাড়া ২৮শে সেপ্টেম্বর এখানে আর এক সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৮০ জন পাক সেনা খতম হয়েছে।
রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী :
বৈদ্যনাথপুর অঞ্চলে দুর্দমনীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক প্রবল আক্রমণে পাক বাহিনীর দশজন হানাদার সহ একজন পাক অফিসার নিহত হয়। এ ছাড়া পর পর নয়াদীঘি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলে গেরিলাবাহিনীর অসম সাহসী আক্রমণে ত্রিশজন শত্রুসৈন্য নিহত এবং সড়ক ও টেলিফোন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৪ঠা অক্টোবর ভূতমারি অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে একটি পাক জীপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জীপের সব কজন সৈনিকই নিহত হয়। ঐ দিনই চিরিয়া বন্দর অঞ্চলে অপর এক সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের আক্রমণে দশজন শত্রু সৈন্য নিহত এবং কয়েকটি রাইফেল হস্তগত হয়।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল