You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.10 | বাংলা দেশের নগর-বন্দর-গ্রাম | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
১০ অক্টোবর ১৯৭১

বাংলা দেশের নগর-বন্দর-গ্রাম
—মাতব্বর

বাংলা দেশের নগর-বন্দর ও গ্রামের কথা লিখতে বসে আজকে গ্রামের কথাই লিখব; বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামগুলো মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে একথা অবশ্যই সত্য। পাক হানাদারদের বিতাড়িত করে গ্রাম বাংলায় যে আজ মুক্তি বাহিনী মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে পেরেছেন তার পেছনে গ্রাম বাংলার গ্রাম্য মানুষের অনেকখানি দান রয়েছে।
মু্ক্তি ফৌজ আজ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে সক্রিয়। কিছুদিন আগেও গ্রামগুলো ছিল পাক সামরিক শাসনপুষ্ট মুসলিম লীগ আর জামাতের তথাকথিত নেতাদের নিয়ন্ত্রণে; এরা গ্রাম বাংলার নিরীহ মানুষদের উপর যখন তখন চড়াও হয়ে যথেচ্ছ অত্যাচার উৎপীড়নে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এই সব মানুষগুলো এতদিন ধরে প্রতিমুহূর্তে অপেক্ষা করেছে মুক্তি বাহিনীরা।
আজকে গ্রামবাংলার এই সব নিষ্পেষিত মানুষগুলো হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে, কেননা গ্রামবাংলা থেকে আজ বলতে গেলে মুসলিম লীগ আর জামাতের দালালরা নির্ম্মুল হয়েছে। প্রতিটি গ্রামেই এই সব বিশ্বাসঘাতকরা মুক্তি বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছে; দু’চারজন আজো যারা বেঁচে আছে তারা মুক্তি বাহিনীর ভয়ে গ্রাম বাংলা ছেড়ে শহরে গিয়ে পাক সৈন্যের ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু ওরা যতই পাক সৈন্যের পরিবেষ্টিত আশ্রয়ে গিয়ে উঠুক না, মুক্তি বাহিনী এই সব বেইমানদের ক্ষমা করবেনা।
কিছুদিন আগে রাজাকাররাও গ্রাম বাংলায় সক্রিয় ছিল। রাজাকাররা বাঙালী অবশ্যই, কিন্তু ওরা বাঙালীর কলঙ্ক। সাধারণতঃ মুসলিম লীগ আর জামাতে ইসলামের পোষ্য গুন্ডারাই এই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। অবশ্য ইয়াহিয়া সরকারের বাঙালী নিধনের এ আর এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। বর্তমানে খান সেনারা মুক্তি বাহিনীর ভয়ে এত ভীত যে মুক্তি বাহিনীর সংবাদ পেলেও এরা ছাউনি থেকে বেরোতেই চায়না। মুক্তি বাহিনীর মোকাবিলায় তাই তারা রাজাকারদের পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু অসম সাহসী মুক্তি সেনাদের কাছে রাজাকাররা তো তুচ্ছ। তাই বাংলাদেশ থেকে রাজাকার বাহিনীও নির্ম্মুল হয়ে আসছে। দু’মাসের মধ্যে প্রায় তিন হাজার রাজাকার মুক্তি বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছে। বহু সংখ্যক মুক্তি বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছে। বাকী যারা আছে তারা প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছে।
গ্রামবাংলা আজ তাই সব দিক দিয়েই মুক্ত। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার অনেক গ্রামাঞ্চলে শাসন ব্যবস্থা চালু করেছেন, আশা করা যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই থানা পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার শাসন ব্যবস্থা চালু করতে পারবেন।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠার জন্যে সবার আগে গ্রাম বাংলার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে পরবর্তী সংখ্যায় বিস্তৃত আলোচনা করা হবে। গ্রাম বাংলার মানুষকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল