বিপ্লবী বাংলাদেশ
১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
৮৭ জন পাকসেনা হত : প্রচুর অস্ত্র দখল
কাউখালি থানা, কাঁঠালিয়া থানা, ভান্ডারিয়া থানা ধ্বংস : ৮৭ জন পাঞ্জাবী পাক পুলিশ নিহত : প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার
বরিশাল :
বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে, মুক্তিবাহিনী কাউখালী থানা আক্রমণ করে থানাটি ধ্বংস করে দিয়েছে। থানার সমস্ত রাইফেল মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে জানা যায় কাউখালীর কোন এক স্থানে মুক্তি বাহিনীর ঘাঁটি ছিল। এই সংবাদ স্থানীয় থানার দারোগা এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জানতে পেরে কিছু দালাল পুলিশ এবং রাজাকার নিয়ে ঘাঁটির উপর হামলা চালায়। মুক্তি কমান্ডোদের প্রচন্ড মারের মুখে হানাদাররা পালিয়ে যায়। কিন্তু দারোগা এবং চেয়ারম্যান মুক্তি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সংবাদ পেয়ে পরের দিন বরিশাল থেকে পাক বর্বর সৈন্যরা গান বোট দিয়ে কাউখালীর উপর ব্যাপক হামলা চালায়। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নিরীহ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মুক্তিবাহিনী কিছুটা সরে এসে আবার আঘাত হানার প্রস্তুতি চালাচ্ছে। আর এক খবরে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী কাঁঠালিয়া এবং ভান্ডারীয়া থানা আক্রমণ করে ৮৭ জন পাঞ্জাবী পুলিশকে হত্যা করে। বর্তমানে এই থানার সমস্ত এলাকা মুক্ত। মুক্তিফৌজ হলতাপুরের হোসেন খান এবং লেবুখালীর চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলীকেও হত্যা করেছে। এছাড়া বরিশালের প্রতিটি থানায় মুক্তিবাহিনীর জোর তৎপরতা চলছে।
পটুয়াখালী :
জানা গেছে, আমাদের অসম সাহসী মুক্তিবাহিনী বেতাগী থানার কুখ্যাত দালাল কাদের ও জেন্নাতকে হত্যা করেছে। এছাড়া সমাজবিরোধী কাজের জন্য শান্তি কমিটির সদস্য ফজলু, বাখুরুদ্দীন, হামিদ ও আমু কেরাণীর সমস্ত সম্পত্তি স্থানীয় গরীব জনগণের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছে। মুক্তিবাহিনী মঠবাড়ীয়া থানার কুখ্যাত মুসলীম লীগ দালাল সামাদ মাষ্টার, রওন দফাদার ও মন্নানকে হত্যা করেছে। এছাড়া দাউদখালীর দেলোয়ার সহ ৫ ডাকাতকে হত্যা করেছে।
খুলনা :
আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধি খুলনার বিভিন্ন শহর ঘুরে এসে জানিয়েছেন মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এই সফরকালীন সময়ে আমাদের প্রতিনিধি মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের কতিপয় ঘাঁটিতে প্রবেশ করার সুযোগ পান। এ সকল স্থানে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা (হীরু), ক্যাপ্টেন মাহবুব, লেফটেন্যান্ট মোহম্মদ খুরশীদ, (নেভাল ফোর্স) প্রভৃতি সামরিক অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। প্রতিটি ঘাঁটিতেই বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ আমাদের রণাঙ্গন প্রতিনিধিকে হাসি-খুশী মুখে অভ্যর্থনা জানান।
নোয়াখালী :
৯ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা নোয়াখালী শহরের কুখ্যাত দাঙ্গা নায়ক গোলাম সারোয়ারকে হত্যা করেছে। হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে কমান্ডোরা এই ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার নায়ককে হত্যা করেছেন। এতে স্থানীয় জনসাধারণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল