You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

মুক্তি যোদ্ধার জীবনলিপি
—এস.এম. ইকবাল

(টাঙ্গাইল থেকে)
এখন আমরা দুর্গম পাহাড়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি। কেন না এইমাত্র সংবাদ পেলাম, কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের উপর বিমান হামলা হচ্ছে। বিমান হামলার কারণ গত কয়েকদিন ধরে শত্রু সৈন্যরা এখানে এসে প্রচন্ড মার খেয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে উপর্যুপরি আঘাত হেনেও পাক হানাদাররা আমাদের এতটুকু প্রতিহত করতে পারেনি। বরং গত পনেরো দিনের যুদ্ধে প্রায় চারশত খানসেনা ধ্বংস হয়েছে এখানে। প্রচুর শস্ত্রশস্ত্র আমাদের দখলে এসেছে। প্রচন্ড মারের চোটে প্রতিবারই ওরা প্রাণ নিয়ে পালিয়েছে।
টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এতো সেদিন বিদেশী কয়েকজন সাংবাদিক এসেও এর সত্যতা প্রমাণ করে গেছেন।
হঠাৎ র‌্যাডার সংকেত দিতে শুরু করল। বুঝলাম হানাদাররা আসছে। সাইরেন বাজল। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ট্রেঞ্চের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ট্রেঞ্চের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
বিষ-দাঁত নিয়ে এগিয়ে আসছে বর্বর দস্যুরা। ওদের বিষ-দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। প্রতিহিংসার প্রতিশোধ নিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে খান সেনাদেরকে যে ওদের প্রতিহিংসার থেকেও আমাদের প্রতিশোধ কত কঠিন।
আর ভাববার সময় পেলাম না। দুটো ফাইটার এরি মধ্যে মাথার উপর চক্কর দিতে শুরু করল।
হাতের এল-এম-জিটা শক্ত করে ধরে নিলাম। নির্দেশ ছিল, বোমাবর্ষণ করতে হলেই বিমানকে ছোঁ মেরে নীচে নেমে আসতে হয় আর ঠিক তখনই তার উপর যদি গুলি লাগান যায় তা হলেই বিমান পড়ে যেতে বাধ্য।
দেখলাম সামনের বিমানটা ছোঁ মেরে নেমে এল নীচে। হাতের এল-এম-জিটা গর্জন করে উঠল। কিন্তু লক্ষ্য ব্যর্থ হল। অদূরেই বোমা বর্ষণ হল। দেখলাম বোমার আঘাতে পাহাড়ের একটা চূড়া সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল। ভাগ্যিস ওখানে আমাদের মুক্তি সেনারা কেউ ছিল না। আবার নেমে এল একটা বিমান। হাতের মেশিন গানটা আবার গর্জন করে উঠল। সাথে সাথে আরো অনেকগুলো শব্দ। বুঝলাম অন্যান্য বন্ধুদের হাতের অস্ত্রও এবার গর্জন করে উঠেছে।
মুহূর্ত মাত্র। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ততক্ষণে বিমানে আগুন ধরে গেছে। এবারের লক্ষ্য আর ব্যর্থ হয়নি। আনন্দের আতিশয্যে সামরিক নিয়ম লংঘন করে ট্রেঞ্চ থেকে উঠে পড়লাম। দেখলাম প্রজ্বলিত বিমানটা একটা বিকট শব্দ করে অদূরের ঘাঁটির সম্মুখে পড়ল।
ছুটলাম সেদিকে সবাই। ততক্ষণে অন্য বিমানটা পালিয়েছে। ছুটতে ছুটতে দেখলাম, প্রজ্বলিত বিমানের আলোয় আমাদের ঘাঁটির স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার মাঝের স্বর্ণালী বর্ণের ম্যাপটায় যেন বিদ্যুৎ খেলছে।
দাঁড়িয়ে পড়লাম। এই মুহূর্তে আমার মনে হল বাংলা মা যেন আশীর্বাদ করছে তার সন্তানদের।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!