You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.29 | মেজর জলিলের সুনিপুণ রণকৌশলে খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৯ আগস্ট ১৯৭১

বিজয় বার্তায়
মেজর জলিলের সুনিপুণ রণকৌশলে খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত

২৭শে আগষ্ট, খুলনা সেক্টরের সামরিক প্রধান, সুদক্ষ, স্থিরবুদ্ধি সম্পন্ন, সুনিপুণ রণযোদ্ধা, তরুণ মেজর এম.এ. জলিলের পরিচালনাধীনে গত ৭ দিনে খুলনা জিলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। পাক হানাদার এই এলাকা ছেড়ে যানবাহন এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আগষ্ট মাসের গত ৮ তারিখে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী বুড়িগোয়ালিনী ফরেষ্ট অফিস থেকে হাইপাওয়ার ওয়ারলেস জেনারেটর ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র দখল করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে মেজর জলিল খুলনা জেলার প্রতিটি রণাঙ্গন এবং মুক্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। তাঁর সাথে আছেন ক্যাপ্টেন সুলতান, লেফটেন্যান্ট মফিজ।
গোপালগঞ্জ এলাকায়ও মুক্তি বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। যার ফলে ইয়াহিয়া বাহিনী গ্রামাঞ্চলের ঘাঁটি ছেড়ে পিছু হটছে। এবং বরিশাল থেকেও পাক বাহিনী প্রচন্ড মার খেয়ে পালিয়ে যাবার পথ খুঁজছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে জলিলের সুনিপুণ যুদ্ধ পরিচালনার ফলে। খুলনা এবং বরিশাল রণাঙ্গন পরিচালনা করেছেন যথাক্রমে ক্যাপ্টেন হুদা, লেফটেন্যান্ট বেগ, লেফটেন্যান্ট আরেফীন, লেফটেন্যান্ট জিয়া।

খুলনা :
২৫শে আগষ্ট, বাংলাদেশের মুক্তি সেনারা বান্ধা এলাকায় পাক হানাদারদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ করে শতাধিক সৈন্য নিহত করেছেন। এ ছাড়া পাইকগাছা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, কইখালী, উকলা, বসন্তপুর, পারুলীয়াতে মুক্তি বাহিনীর জোর তৎপরতা চলছে। মোড়লগঞ্জে এক সম্মুখ যুদ্ধে অসংখ্য পাক সৈন্য নিহত এবং আহত হয়েছে।

ফরিদপুর :
২৭শে আগষ্ট, ফরিদপুর, আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, ঘাঘর থানা এখন মুক্তি যোদ্ধাদের দখলে।

যশোহর :
তেরখাদা কাটেংগা হাই স্কুলে রাজাকারদের ঘাঁটি ছিল। মুক্তি বাহিনী এই ঘাঁটি আক্রমণ করে ২৬ জন রাজাকারকে হত্যা এবং ১৭ জনকে আহত করেছেন। এখানের যুদ্ধে একজন মুক্তি বাহিনী শহীদ হন। এছাড়া গত সপ্তাহে যশোহরের বিভিন্ন স্থানে গেরিলাদের আক্রমণে বেনাপোল সড়কে কালভার্ট, সেতু এবং কয়েকটি পাক ঘাঁটিসহ ৪৯ জন পাক সৈন্যকে খতম করেছেন।

কুষ্টিয়া :
২৫শে আগষ্ট, মুক্তিফৌজ এখানের একটি সামরিক ঘাঁটি আক্রমণ করে ২০ জন খান সৈন্যকে শেষ করেছেন।

দিনাজপুর :
কয়েকদিন আগে, লালমণিরহাট থেকে হাতিবান্দা পর্যন্ত যে বিরাট পথ চলে গেছে সেই সড়ক পথ মুক্তি বাহিনী ডিনামাইট দিযে ধ্বংস করে দিয়েছে।

কুমিল্লা :
গত সপ্তাহে নোয়াখালী-কুমিল্লা-শ্রীহট্টের মাঝামাঝি সড়কের উপর মুক্তি বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে একজন বালুচ ও একজন জুনিয়ার কমান্ডিং অফিসার সহ ৪৩ জন পাক সৈন্যকে খতম করেছেন। এ ছাড়া ফকিরহাট-কাসিমপুর রেল লাইট ধ্বংস করে দিয়েছেন।

একজন ব্রিগেডিয়ার সহ বহু পাকসৈন্য হতাহত
ঢাকা :
সংবাদে জানা গেছে যে মুক্তি বাহিনী ঢাকার অত্যাধুনিক বিপণিকেন্দ্র নিউ মার্কেটের মধ্যে পাক সৈন্যদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্রিগেডিয়ার করিম সহ বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন। আর এক সংবাদে জানা গেছে মুক্তিবাহিনী ঢাকার রমনা থানায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়েছে।

সিলেট :
২৫শে আগষ্ট, সিলেট, এখানে সৈন্য বাহিনীর একটি বিশেষ ট্রেণের উপর মুক্তি কমান্ডোরা আক্রমণ চালিয়ে দুটি কামরার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে অন্তত ১০ জন সৈন্যকে যমের বাড়ী পাঠিয়েছে। চাঁদপুরেও তিন জন সেনাকে খতম করেছে মুক্তি বাহিনী। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালিয়ে তাঁরা গত তিনদিনে ৬০ জন সৈন্যকে খতম এবং প্রায় শতাধিক সৈন্যকে আহত করেছেন।

চট্টগ্রাম :
১০ কোটি টাকা মূল্যের এবং ১৫ হাজার টন ওজনের পাকিস্থানী জাহাজ “অল আব্বাস” মুক্তি বাহিনীর কমান্ডোরা মাইন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাজার হাজার জনতা নদীতীরে দাঁড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাহাজটিকে ডুবতে দেখেন। এক সপ্তাহে পর পর ৪ খানা জাহাজ নিমজ্জিত হল এখানে।

পদ্মা জাহাজ ধ্বংস
১৬ই আগষ্ট—হাবিলদার আফজল হোসেন এবং লেঃ হাবিলদার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল মুক্তিফৌজ খুলনা সেক্টরে ‘পদ্মা’ জাহাজটি ধ্বংস করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, এই ‘পদ্মা’ জাহাজে করে বিদেশ থেকে পাক হানাদারদের অস্ত্রশস্ত্র এসেছিল।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল