You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৯ আগস্ট ১৯৭১

সাবধান ইয়াহিয়া
—সুধীর চৌধুরী

বাংলাদেশের সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের সৈন্যবাহিনী আজ আর শুধু স্থলবাহিনী নিয়েই ইয়াহিয়ার দখলদার শত্রুবাহিনী নিধনে নিয়োজিত নয়, স্থলে জলে অন্তরীক্ষে সর্বত্রই আজ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিবাহিনী শত্রু নিধনে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ সরকারের নৌবাহিনী বিগত ১০ই আগষ্ট মংলা পোর্টে আট খানা জাহাজ এবং চট্টগ্রামে সৈন্য ও অস্ত্র বোঝাই চারখানা জাহাজ এবং নারায়ণগঞ্জে চারখানা জাহাজকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয় এবং এ পর্যন্ত পনেরোখানা গানবোটকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। এছাড়া খুলনা জেলায় মুক্তি বাহিনীর নৌসেনারা দুখানা অস্ত্র বোঝাই মোটরলঞ্চকে পাকড়াও করে আনতে সক্ষম হয়।
আকাশ পথেও তার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ভীত ইয়াহিয়া সরকারের পক্ষে কোন বিদেশী প্লেনও বাংলাদেশে এসে নামতে সাহস করছে না।
তাই আজ আত্মপ্রত্যয়ের সুরে বলা যায় সাবধান ইয়াহিয়া খাঁ সাবধান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী নওযোয়ানেরা তোমাকে থোড়াই কেয়ার করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের সাড়ে সাত কোটি হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান আজ তার সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের নির্দেশে তোমাদের খতম করতে প্রস্তুত। হানাদার তস্করদের একটিকেও তারা বাঁচতে দেবে না বাংলাদেশের মাটিতে।
ইয়াহিয়া জেনে রাখুক, জেনে রাখুক তার সামরিক জুনটা সরকার এবং জেনে রাখুক তার পরাস্ত অপহরণকারী লোভী এবং স্তাবক দালালের দল, সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যকে ভুলে যায় নি। ভুলে যায় নি স্বাধীনতাকে লালন করবার জন্যে জীবন দেওয়া-নেওয়ার খেলায় বাংলার দামাল ছেলেদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা।
শস্যশ্যামলা নদীমাতৃক বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে আজ রণদামামার বজ্রনির্ঘোষ স্থলে-জলে-অন্তরীক্ষে তার আহ্বান—ভীরু কাপুরুষ ও নরপশু ইয়াহিয়া তোমার জহ্লাদ বাহিনীকে এগিয়ে আজ মুখোমুখি সংগ্রামে মৃত্যুবরণের জন্যে প্রস্তুত হও।
অপদার্থ ইয়াহিয়া এবং টিক্কা খাঁর একবারও মনে পড়েনি বাঙালীর জাতীয় চরিত্রের কথা, তার সত্ত্বার কথা, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ব্যবধান-ভাষা-সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যমন্ডিত স্বাধীনতার সংগ্রাম ও তার গৌরবময় ইতিহাসের কথা।
কিন্তু তবু হুঁস হলো না দস্যু সর্দার ইয়াহিয়ার। টিক্কা খাঁর মত অপদার্থ শয়তান এবং তার সামরিক জুন্টার বর্বরদের লেলিয়ে দিয়ে বিস্ময়াবিষ্ট সভ্যতার চোখের সামনে নারীধর্ষণ, লুন্ঠন ও হত্যায় সৃষ্টি নজিরবিহীন ইতিহাস।
তাই ২৫শে মার্চ গভীর রাত্রে আতঙ্কগ্রস্থ বাংলাদেশের মায়েদের সেই ভীতি বিহ্বল ক্রন্দনের কথা বাংলাদেশের মানুষ কোনদিন ভুলে যাবে না। ভুলে যাবে না রক্তলোভী পশু সৈনিকদের সেই ভয়ঙ্কর অমানবিক অত্যাচারের কথা। আজ তাই স্থলে জলে অন্তরীক্ষে বাংলার বীর সৈনিকেরা প্রতিরোধের পাঞ্জা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাবধান হানাদার দস্যুর দল সাবধান ইয়াহিয়া টিক্কার সামরিক জুনটা। তোমাদের কাল হরণ এবং ২৫শে মার্চের সেই শঠতার খেলা এবারে শেষ হতে চলেছে। নরমাংস লোভী মিথ্যা ধর্মের ধ্বজাধারী শকুনের দল—সাধ্য থাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করে আত্মরক্ষা কর—নতুবা আজ সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে প্রায়শ্চিত কর ক্ষমাহীন অপরাধের।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!