You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.21 | বাংলার আনাচে কানাচে মুক্তিবাহিনী —মিন্টু বসু | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ আগস্ট ১৯৭১

বাংলার আনাচে কানাচে মুক্তিবাহিনী
—মিন্টু বসু

২৫শে মার্চ ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বর্বর বাহিনীর মোকাবিলায় বাংলার সাড়ে সাতকোটি মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন সেই মানুষগুলো বলতে গেলে মনের অদম্য সাহসের জোরেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। অস্ত্র বলতে কিছুই ছিল না, পুরাণো আমলের কিছু অকেজো রাইফেলই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। একটা সুসজ্জিত বাহিনীর কাছে এ শক্তি কিছুই নয়, তবু সাধারণ অস্ত্র নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নিষ্পেষিত বাংলার সাড়ে সাতকোটি নির্যাতিত মানুষ।
সাময়িক ভাবে সেদিন আমাদের বাহিনী পিছনে সরে এলেও তাকে আমরা পরাজয় ভাবতে পারিনি। বরং সেদিনের সেই পিছনে সরে আসাই আমাদের জয়কে আরো সুনিশ্চিত করেছে। যেহেতু সেদিন নিরস্ত্র মানুষগুলো যুদ্ধ করতে করতে পিছনে সরে আসতে পেরেছিলেন বলেই আজ আমরা সঙ্ঘবদ্ধ হতে পেরেছি।
আজ গ্রাম বাংলার প্রতিটি আনাচে কানাচে এমন কি শহরগুলোতেও মুক্তি বাহিনী ছড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, তাঁরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে বাংলাদেশ থেকে পাক হানাদারদের ঘাঁটি সমূলে উচ্ছেদ করবেনই। তাই প্রতিনিয়ত আক্রমণ করে চলছেন মুক্তি বাহিনী পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোর উপর। প্রচন্ড মারের মুখে মরি কি পড়ি হয়ে ঘাঁটি ছেড়ে পালাচ্ছে ইয়াহিয়ার লেলিয়ে দেওয়া কুকুরগুলো। এর মধ্যে অনেকগুলো ঘাঁটিই মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সাথে সাথে এসেছে পালিয়ে যাওয়া পাক বাহিনীর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। এ অস্ত্রশস্ত্রই আজ মুক্তিবাহিনীর শক্তির সহায়ক। তাই মুক্তি বাহিনীর জয় সুনিশ্চিত।
কিন্তু জয় সুনিশ্চিত করতে যাঁরা আমরণ যুদ্ধ করে চলেছেন তাঁদের পিছনে বাংলা দেশের জনগণকেও এসে দাঁড়াতে হবে। যে যেভাবে পারেন মুক্তি বাহিনীর সহায়তায় তাঁকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া প্রতিটি বাঙালীর কর্তব্য।
বাংলা তথা বাঙালীর দুঃখ দূর হবেই, নিরাশ হলে চলবে না। নিরাশ হওয়া মানেই ভেঙ্গে পড়া, আর ভেঙ্গে পড়া মানেই পাক দুর্বৃত্তদলের ছোবল আরো হিংস্র হওয়া। কিন্তু পশ্চিমা পশুগুলোকে আর এগুতে দেওয়া হবে না কোন ক্রমেই, ওদের বিষদাঁত ভেঙ্গে ফেলতে হবে। ভুললে চলবে না যে, পাক হানাদার বাহিনী আমাদের দেশ ধ্বংস করছে, আমাদের মা-বোনদের উপর ওরা অত্যাচার করছে, ভাইকে গুলি করে মেরেছে, বাপকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করেছে।
তাই মুক্তি বাহিনীর সাহায্যে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলার বুক থেকে হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। জয় আমাদের দ্বারপ্রান্তে, একে বরণ করে নিয়ে আসতে হবে সবাইকে।
আসুন সবাই আমরা এ কাজে ব্রতী হই। আমাদের সবার প্রচেষ্টায় স্বাধীন বাংলাদেশ সার্থক হয়ে উঠুক।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল