You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.29 | কুলাঙ্গার—ইয়াহিয়া: মেহেরুন আমিন | বিপ্লবী বাংলাদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২৯ আগস্ট ১৯৭১

কুলাঙ্গার—ইয়াহিয়া
মেহেরুন আমিন

বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ আজ এক বাস্তব সত্য। এ সত্য বিশ্ববাসীকে অতি দ্রুত স্বীকার করে নিতে হবে। অন্যথা এ অঞ্চল থেকে যে প্রলয়কান্ড শুরু হতে চলেছে, তার বিস্তৃতি আরব সাগর পর্যন্ত হতে বাধ্য।
বাঙালীর এই মরণপণ সংগ্রামে বাঙালীকে তার বেঁচে থাকার তাগিদেই জয়যুক্ত হতে হবে। জনতার পিতার নির্দেশে এই মৃত্যুপণ সংগ্রামে সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আজ ইষ্পাত কঠিন শপথে দৃঢ়—প্রতিজ্ঞ। শত শত ইয়াহিয়া, টিক্কা, ভুট্টো কায়ুম এই যাত্রাপথ স্তব্ধ করার ক্ষমতা রাখে না। ইতিমধ্যেই স্বপ্ন বিলাসীদের তাসের ঘর ঝুর ঝুর করে ভেঙ্গে পড়তে সুরু করেছে। সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যেদিন এই লেলিয়ে দেয়া ডালকুত্তার দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
বাঙালী জাতির পিতা শেখ মুজিব আজ লম্পট ইয়াহিয়ার কারাগারে আবদ্ধ, এবং তাঁর বিচার প্রহসন সুরু হয়েছে। অপদার্থ ইয়াহিয়া জানে না যে শেখ ‍মুজিব শুধু একটি ব্যক্তি নয়, সে একটি আদর্শ। ব্যক্তি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারে, কিন্তু তাঁর আদর্শ চির-ভাস্কর। বাংলাদেশ সেই আদর্শে আজ ঐক্যবদ্ধ। বাঙালী জাতি অমিত শক্তির অধিকারী, বাঙালী স্বভাবতঃই ভদ্র ও অতিথিপরায়ণ। তারই সুযোগে সরলপ্রাণ বাঙালী জাতিকে বিশেষ করে মুষ্টিমেয় দালালদের সহায়তায় তাদেরকে ইসলাম ও সংহতির বুলিতে মোহাচ্ছন্ন করে দীর্ঘ দুই যুগ শোষণ ও বঞ্চনা করে রাখা হয়েছে। “সোনার বাংলা” আজ তাই এক মৃত প্রেতপুরী বই অন্য কিছুই নয়।
শেখ মুজিবরের “বিজ্ঞান ভিত্তিক” বলিষ্ঠ নেতৃত্বই বাংলাদেশের বঞ্চিত ও নির্যাতীত সকল শ্রেণীর মানুষকে অধিকার সচেতন করে তুলেছে এবং তাই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলা—“এ সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” মহান নেতা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠেই সেদিন ঘোষণা করেছেন তাঁর নির্দ্দেশিত পথ ও পন্থা। দুনিয়ার কোন শক্তি নেই বাঙালী জাতিকে তাদের প্রিয় নেতার সুনির্দিষ্ট পথ থেকে সরিয়ে নিতে পারে।
কুলাঙ্গার ইয়াহিয়া জাতে পাঠান কিন্তু তার পৈশাচিক কার্যকলাপ বুঝিয়ে দেয় যে, “ও একটা পাঞ্জাবী জারজ সন্তান।” পাঞ্জাবী চরিত্রের বৈশিষ্ট মদ, মেয়েমানুষ এবং অর্থ। ইয়াহিয়া ঐ তিনটি ভোগ্যপণ্যের একান্ত অনুগত ক্রীতদাস। তেমনি জাতীয় চরিত্রের প্রতীক মোনাফেকী ও বিশ্বাসঘাতকতা। ইয়াহিয়ার চরিত্রেও এসকলেরই অপূর্ব সমাবেশ। তাই ওকে পাঠান বলে স্বীকার করে পাঠান জাতিকে খাটো করা বাঙালীদের পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যিকার পাঠান বলতে আমরা বুঝি পাঠান নেতা খান আব্দূল গফফার খান ও তার যোগ্য পুত্র খান আব্দুল ওয়ালী খানকে। তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই পাখতুন বাসী আজ তাদের স্বাধীনতা ‘রক্তের মাধ্যমে’ আদায় করে নেবে।
ইয়াহিয়ার স্বপ্ন ও বিশ্বাস যে, বঙ্গবন্ধুকে পৃথিবী থেকে “বিচার প্রহসনের” মাধ্যমে সরিয়ে দিতে পারলেই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে পিছু হটবে। ডালকুত্তা এখনও জানেনা যে বাংলার প্রতিটি নওজোয়ানই আজ শেখ মুজিবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে শেখ মুজিবের স্থান অধিকার করছে। আজ তাদের প্রিয় নেতার কেশাগ্র স্পর্শ করার অর্থ হবে শুধু বাংলার স্বাধীনতাই নয় পাঞ্জাবের প্রতিটি ঘরে ঘরে বাংলার নওজোয়ানদের প্রবেশ ও প্রতিশোধ গ্রহণ। ইয়াহিয়াখার বড় মুরুব্বি চীন ও আমেরিকা সেদিন শুধু চেয়েই দেখবে সরলপ্রাণ বাঙালীর জিঘাংসার এক ঐতিহাসিক বিভৎস দৃশ্য। কুলাঙ্গার ইয়াহিয়া মিঃ জিন্নার “অতিসাধের পাকিস্তানের” কবর দিয়েই সন্তুষ্ট হবেনা, সেই সঙ্গে পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটীকে কয়েক খন্ডে বিভক্ত করবে ও পাঞ্জাব—কে দ্বিতীয় বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে বিদায় নেবে। বাঙালী জাতি শুধু স্বাধীনতায় তৃপ্তি পাবেনা; তাকে পাঞ্জাবের রক্তগঙ্গার মধ্য দিয়ে বাংলার লাখো লাখো শহীদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে হবে।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল