You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
৪ আগস্ট ১৯৭১

ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান!

ইয়াখাঁ তুমি সাবধান, বাঙালীর ঘরে বাংলাদেশের ক্ষেতখামার আর অরণ্য প্রান্তরে, কোটী কোটী মুজিবের জন্ম হয়েছে। তারা অমর, তারা অক্ষয়, তারা সব ঈশ্বরের জ্যোতির্ময় আলোক-শিশু, পাকিস্তানের আজরাইল ইয়াখাঁর টুটি টিপে ছিঁড়ে ফেলবার জন্যে তারা প্রস্তুত।

ওরে তেরা সব জয়ধ্বনি কর
আজ নূতনের কেতন ওড়ে
কালবোশেখির ঝড়।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কোটী কোটী মুজিবের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে জয়ধ্বনি উঠেছে—
জয় বাংলার জয়
জয় মুজিবের জয়।।

জল্লাদ ইয়াখাঁ, তুমি ভেবেছ বাংলাদেশের জননায়ককে তুমি কারাগারে-অনাহারে-অনিদ্রায়-শত নির্য্যাতনের মধ্যে রেখে তিলে তিলে অত্যাচারের কাঁটা ফুটিয়ে বাংলাদেশের কলোনী থেকে কোটী কোটী টাকা মুনাফা লুটে তোমার বিবিদের নিয়ে আনন্দের ফোয়ারা ছুটাবে, খুশী করবে তোমার এক চোখ কানা প্রভুদের; কিন্তু সাবধান ইয়াখাঁ, স্তব্ধ কর তোমার শয়তানের চাল, নতুবা তোমার মত আল্লাহদ্রোহী কাফেরকে কখনো বাঙালী ক্ষমা করবে না।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের গদীতে বসে সুরা আর নারীতে মত্ত হয়ে সাড়ে সাত কোটী বাঙালীর অবিসম্বাদী নেতা মুজিবুর রহমানকে কারাগারে রেখে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ইয়াহিয়া যে পাপ ও অন্যায়ের স্রোতে ছুটে চলেছ তার থেকে তোমার পরিত্রাণ নেই।
বাংলার শান্ত সমাহিত শ্যামল প্রান্তরে তুমি রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়েছ, বারো লক্ষের উপর ভাই-বোনদের তুমি হত্যা করেছ, মায়ের সতীত্ব কেড়েছ, স্ত্রী-ভগ্নি আর হাজার হাজার যুবতীদের উপর তোমার লেলিয়ে দেওয়া পশুর দল বলাৎকার করেছ—স্ত্রীর সামনে স্বামীকে হত্যা করেছ, পিতার সামনে পুত্রকে, ভাইয়ের সামনে ভগ্নিকে—
ক্ষমা নেই, ক্ষমা নেই ইয়াখাঁ, অন্যে তোমাকে ক্ষমা করলেও বাঙালী তোমাকে ক্ষমা করবেনা, ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবেনা। রক্তের বদলা তোমাকে দিতেই হবে। প্রাণের বদলে প্রাণ তোমাকে দিতেই হবে।
তোমার ওই কারাগারের দোর খুলে মুজিবের মুক্তি দিতেই হবে—সাড়ে সাত কোটী কোটী বাঙালীর স্বাধীনতা স্বীকার করতেই হবে—,স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামী বীরদের মুক্তি দিতেই হবে—তোমার ওই কারাগারের লৌহশৃঙ্খল থেকে—

কারার ওই লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট
যতসব বন্দীশালায়
আগুন জ্বালা
আগুন জ্বালা
আগুন জ্বালা।

বাউকাঠি (বরিশাল)

বাউকাঠি (ঝালকাঠি) থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে, গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানী দুর্বৃত্তেরা একটি লঞ্চযোগে আসিয়া এই এলাকায় কতগুলি গৃহে অগ্নিসংযোগ করে। কিন্তু এই গ্রামের বীর জনগণ ও মুক্তিবাহিনী বন্দুক, রাইফেল ও ঢাক সড়কি নিয়ে খান দস্যুদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। ফলে ৩ জন খান সেনা নিহত হয় ও ২৭ জন গুরুতররূপে আহত হইয়া লঞ্চযোগে পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশের মুক্ত এলাকার কোন একস্থানে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধির সাথে মেজর এম.এ. জলিলের এক সাক্ষাৎকার ঘটে। এই সাক্ষাৎকারের সময় আমাদের প্রতিনিধি মেজর সাহেবকে খুবই কর্মব্যস্ত দেখতে পান। আমাদের পত্রিকার জন্য কিছু লোক চাওয়া হলে তিনি কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আবেগের সাথে একটি কবিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে লিখে দেন। তাই আগামী সংখ্যায় তার কবিতাটি ছাপাবো বলে আশা রাখি।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!