You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ আগস্ট ১৯৭১

বাংলা দেশ বনা রাষ্ট্র সংঘ
সত্যকাম সেনগুপ্ত

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
[ সব দেশের শক্তি পুঞ্জীভুত হতে হতে এমন অবস্থা হয়েছে যে কোনো দেশের সঙ্গে অপর কোনো দেশের সদ্ভাব নেই। এমন কি, রাষ্ট্রসংঘের সদর দফতর যে দেশে অবস্থিত, অর্থাৎ আমেরিকায়, সেই দেশের সরকার রাষ্ট্রসংঘের নাকের ডগা দিয়েই পাক সরকারকে অস্ত্র সাহায্য পাঠাচ্ছে। উদ্দেশ্য বিশ্ব শান্তি রক্ষা, অর্থাৎ গণহত্যায় সাহায্য করা ]
…এবং আমরা নীতিগত ভাবে স্থির করিতেছি, এবং সেই নীতির প্রয়োগবিধি প্রস্তুত করিতেছি যে সৈন্যশক্তি ব্যবহৃত হইবে কেবলমাত্র সার্বজনীন স্বার্থে :
[ এখনো কি রাষ্ট্রসংঘের সৈন্যশক্তি ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয়নি? বাংলাদেশের গণহত্যা রোধ করা কি সার্বজনীন স্বার্থ নয়? সার্বজনীন স্বার্থের মানে বুঝতে হবে কি ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে ]
…আন্তর্জাতিক উন্নতিকল্পে সর্বদেশের দ্রব্যাদি ও সাহায্য ব্যবহার করিব।…
[ একটি প্রশ্ন : শ্রী থান্ট মহাশয়, আপনি বাংলাদেশের অত্যাচারিত, গৃহহীন, বস্ত্রহীন, নিরন্ন কোটি কোটি জনগণের জন্য কতটুকু সাহায্য অদ্যাবধি পাঠিয়েছেন? ]
রাষ্ট্র সংঘের ঘোষণা পত্রের সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের কার্যকলাপের এমন অদ্ভূত (অ) মিল দেখে অবাক হবার কিছু নেই। আলজিরিয়া, কঙ্গো, কোরিয়া, ভিয়েৎনাম ইত্যাদিতে রাষ্ট্রসংঘ যে নীতি (নাকি দুর্নীতি) গ্রহণ করেছিল তারই চরম পরিণতি দেখা দিয়েছে ১৯৭১ এর বাংলাদেশে।
রাষ্ট্র সংঘের স্বরূপ এত বেশী প্রকট হয়ে গেছে যে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামীরা তাদের সংগ্রাম রাষ্ট্র সংঘের সাহায্য ছাড়াই চালাতে পারবে। রাষ্ট্র সংঘ যে যে দেশগুলির হয়ে দালালী করে, সে দেশগুলিরও সতর্ক হওয়া দরকার। তাদের জেনে রাখতে হবে যে একটি সমগ্র জাতি স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম চালাচ্ছে। এই সংগ্রামের মাধ্যমে যদি কোন দেশ রাষ্ট্র সংঘকে শিখন্ডী খাড়া করে নিজেদের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামী জনগণ সে দেশকে রেহাই দেবেনা।
আমি পূর্বে অন্যত্র লিখেছি, আবার লিখছি, ঘোষণা করছি, যাই ঘটুক না কেন ইতিহাসের ধারাকে পালটে দেওয়া যায় না। যখনই কোন দেশের অত্যাচারিত; নিপীড়িত জনগণ সমগ্রভাবে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে, তখন তার জয় অবশ্যম্ভাবী। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে।
এক্ষেত্রে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর জয় হবেই। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিমুহূর্তে জয়পরাজয় যারই হোক না কেন, অবশেষে বাঙলাদেশ স্বাধীন হবে। গঠিত হবে এক স্বাধীন দেশের স্বাধীন জনগণের দ্বারা এক স্বাধীন সরকার। এবং তখন রাষ্ট্রসংঘ, তথা সমগ্র বিশ্ব, তাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হবেই।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!