You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিপ্লবী বাংলাদেশ
২১ আগস্ট ১৯৭১

জেনারেল টিক্কা খাঁ কর্তৃক পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র

১৩ই আগষ্ট। ঢাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, জেনারেল টিক্কা খাঁ বর্তমানে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তার মতে পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁ দুর্বল ও ভীরু চিত্তের মানুষ। তাই আজ পাকিস্তানের সবচেয়ে যখন দুঃসময় তখন ইয়াহিয়ার মত ভীরু চিত্তের লোক পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করতে পারবে না, এবং কঠিন হস্তে সামরীক শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে জেনারেল ইয়াহিয়া অনুপযুক্ত ব্যক্তি।
কিন্তু জেনারেল টিক্কা নিজেকে পাক প্রেসিডেন্টের গদী লাভের যতই উপযুক্ত মনে করুন না কেন বাধাও কম নয়। এক : টিক্কা নিজে থাকেন ঢাকায়। রাজধানীর নিত্য হাল-চাল এবং সামরীক বাহিনীর একটা বিশেষ অংশের সঙ্গে তার নিত্য যোগাযোগ সম্ভব নয়। দুই পাকিস্তানের স্থল ও নৌবাহিনীর দুই প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়ার নিজের লোক। অর্থাৎ তাদের উপরে প্রেসিডেন্টের প্রভাব ও নেক নজর কম নয়।
অন্যদিকে সিন্ধু এবং বেলুচের সামরিক শাসনকর্তা জেনারেল টিক্কার সমর্থনে রয়েছে। অতএব শক্তি ও সুযোগের প্রতিক্ষা।
এদিকে ঢাকা থেকে সামরীক বিশ্বস্ত সূত্রের খবরে প্রকাশ। জেনারেল ইয়াহিয়ার ঢাকা পরিদর্শনের পর তার তিনটি তারিখ গত হয়েছে তিনি আসেন নি। বিগত আগষ্টের তিন চার তারিখের মধ্যে পুনরায় ঢাকায় এসে বিভিন্ন রণাঙ্গন পরিদর্শনের কথা ছিল, কিন্তু এবারেও তিনি সাহসীকতার পরিচয় দিতে পারেন নি।
এ ব্যাপারে জেনারেল ইয়াহিয়ার অভিযোগ জেনারেল টিক্কা আজ ছ-মাস যাবৎ চেষ্টা করেও এবং সামরীক শক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যাবহার করেও বাংলা দেশ ত দূরের কথা ঢাকার আশ পাশ থেকেও মুক্তি বাহিনীর গেরিলা তৎপরতা দমনে ব্যর্থ হয়েছেন।
তাদের এই পরস্পর বিরোধী উক্তি এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া পর্দার অন্তরালে গোপন ষড়যন্ত্রে উভয়কে লিপ্ত করেছে।
জেনারেল টিক্কার বেগম যেখানে কোথাও যেতে নারাজ, সেখানে গত জুলাই মাসের আট তারিখ, এবং সতের ও সম্ভবতঃ আঠাশ উনত্রিশের দিকে অর্থাৎ একমাসে তিনবার ঢাকা-করাচী করাচী-রাওলপিন্ডি করে বেড়িয়েছেন। এটা যথেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
পাক সামরীক রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল থেকে জানা যায়, জেনারেল টিক্কা খাঁর ব্যক্তিগত গোপন খবর নিয়েই নাকি মিসেস টিক্কা পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে বিশেষ কয়েকজন সামরীক অফিসারের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে এসেছেন।
জেনারেল ইয়াহিয়ার মতে জেনারেল টিক্কা সাহসী শক্তিমান, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে তিনি ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছেন অতএব টিক্কা খাঁর পরিবর্তে কোন যোগ্য ব্যাক্তিকে বাংলাদেশের সামরিক শাসনকর্তা হিসাবে নিয়োগের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কিন্তু জেনারেল টিক্কাকে চটাতে তিনি সাহস করছেন না।
অপর দিকে জুলাই মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশের সামরিক গভর্ণর টিক্কা খাঁর গতিবিধিও গোয়েন্দা কাহিনীর মত হয়ে উঠেছে।
তিনি নিজে কাউকেই প্রায় দর্শন দিচ্ছেন না। টিক্কা রূপী এক নকল টিক্কাকে দিয়ে আমদরবারের সাক্ষাৎ পর্ব সমাধা করা হয়েছে।
আসল টিক্কা পর্দার অন্তরালে বসে নকল টিক্কার পুতুল নাচ দেখছে। তাই পাক সামরিক শাসন যন্ত্রের মধ্যে শক্তি পরীক্ষা এবং ষড়যন্ত্রের মুখোস শিঘ্রই বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়বে।

সূত্র: বিপ্লবী বাংলাদেশ ফাইল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!