You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভাষা-শহীদ আবদুল জব্বারের স্ত্রীর আবেদনপত্র সমূহ

To
The District Magistrate
Mymensingh
Sir
অধিনের বিনীত নিবেদন এই যে, আমি ময়মনসিংহ জিলার গফরগাও থানার অন্তর্গত ৫নং ইউনিয়নের পাচুয়া গ্রামের অধিবাসিনী। আমার স্বামী আবদুল জব্বার বিগত ১৯৫২ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারী মুসলীম লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ঢাকা ম্যাডিকেল হােষ্টেল প্রাঙ্গনে মারা যায়। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি দেড় বৎসর বয়সের একটি ছেলেকে লইয়া নিরুপায় হইয়া মুসলীম লীগ সরকারের কাছে আমার ও উক্ত ছেলের ভরণপােষণের জন্য অনেক দরখাস্ত পেশ করিয়াছি, কিন্তু সরকার আমার কোন বিহিত করেন নাই। আমার স্বামীর অর্থ-সম্পত্তি বিশেষ কিছুই ছিল না। সামান্য মালামাল যাহা কিছু ছিল সে সকল বিক্রয় করিয়া কিছুকাল জিবীকা নির্বাহ করিয়াছি। শেষে নিরুপায় হইয়া আমার স্বামীর কনিষ্ট ভ্রাতা ময়মনসিংহ জিলার হালুয়া ঘাট থানার ৫নং গাজীর ভিটা ইউনিয়নের অধীন শিমুলকুচি গ্রামের আবদুল কাদিরের বাড়ীতে চলিয়া যাই। তথায় যাওয়ার পর হইতেই আবদুল কাদির আমাকে ও আমার ছেলে নূরুল ইসলামকে বহু কষ্টে প্রতিপালন করিতেছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ কোয়ালিসান সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারবর্গের জন্য ২০০০ দুই হাজার টাকা করিয়া সাহায্য করিয়াছে বলিয়া বাং ২০শে অগ্রহায়ণ ইং ৬ই অক্টোবর তারিখে ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশ করিয়াছে।
ইক্ত মঞ্জুরীকৃত টাকাগুলি যাহাতে আমার ও আমার ছেলের ভরণ-পােষণ লেখা পড়ার এবং নূরুল ইসলামের লালন পালন করার জন্য আবদুল কাদির মিঞাকে আমাদের অভিভাবকতায় টাকা দেওয়ার জন্য হুজুরের কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি।
নিবেদক
আমেনা খাতুন
স্বামী শহীদ মােঃ আবদুল জব্বার
সাং পাচুয়া
থানা-গফর গাও
জিল-ময়মনসিংহ
সাং-শিমুলকুচি
থানা-হালুয়া ঘাট
জিল-ময়মনসিংহ

Received by Regd. Post
Addl. Collector
Mymensingh
10-4-1957
To
The District Magistrate
Mymensingh
Dated 21st May, 1957
Sir,
আজ্ঞাধীনের বিনীত আরজ এই আমার স্বামী মৃত আবদুল জব্বার, পিতা মৃত হাছন আলী, সাকিন পাচুয়া ৫নং বাওনা ইউনিয়ন, থানা গফরগাও অধীনে বসবাস করিতেছিলেন। কিন্তু আমার দুরাদৃষ্ট যে আমার স্বামী বিগত ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঢাকা নগরে পুলিশের গুলিতে মারা যান।
সদাশয় গভর্নমেন্ট বাহাদুর আমার দুঃস্থ পরিবারের ভরণ পােষণের জন্য এককালিন, ২০০০ (দুই হাজার) টাকা মঞ্জুর করেন। বর্তমানে উক্ত টাকাটা আপনার অফিস হইতে গফরগাও সার্কেলের মাননীয় সার্কেল অফিসার সাহেবের অফিস মারফত দেওয়ার জন্য আদেশ হইয়াছে বলিয়া জানিতে পারিলাম।
কিন্তু বিগত অভাবের সময় আমি আমার পরিবার নিয়া নিঃসহায় অবস্থায় পড়িলে গফরগাও থাকায় সহায় সম্পত্তি বাড়ীঘর বিক্ৰী দিয়া হালুয়া ঘাট থানার ৫নং গাজীর ভিটা ইউনিয়নে শিমুলকুচি গ্রামে আমার মৃত স্বামীর কনিষ্ট ভাতা আবদুল কাদিরের বাড়ীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করিয়া আসিতেছি। গফরগাঁও এলাকায় আমার কোন কিছুই বর্তমানে নাই।
সেমতে প্রার্থনা উক্ত টাকাটা হালুয়াঘাট সার্কেলের মাননীয় সার্কেল অফিসারের মারফত আমার মৃত স্বামীর কনিষ্ট ভ্রাতা আবদুল কাদিরের অভিভাবকতায় অতি সত্ত্বর দিয়া আমি ও আমার পরিবারের লােকজনকে প্রতিপালন করিতে আজ্ঞা হয়। আরজ ইতি।
নিবেদক
আমেনা খাতুন
প্রযত্নে আবদুল কাদির
সাকিন শিমুল কুচি
৫নং গাজীর ভিটা
থানা হালুয়াঘাট
জিলা ময়মনসিংহ
Mymensingh District Collectorate Records, General Department, Collection No. XXXV-10, 1957.

বাংলা ভাষা প্রচলনে রাষ্ট্রপতি শেখ র রহমানের নির্দেশ
রাষ্ট্রপতির সচিবালয়
গণভবন, ঢাকা।

সংখ্যা-৩০/১২/৭৫-সাধারণ৭২৯/৯(৪০০)
১২ই মার্চ, ১৯৭৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, স্বাধীনতার তিন বৎসর পরেও অধিকাংশ অফিসআদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজী ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালবাসা নেই দেশের প্রতি সে তার ভালবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ তিন বৎসর অপেক্ষার পরও বাংলাদেশের বাংগালী কর্মচারীরা ইংরেজী ভাষায় নথিতে লিখবেন সেটা অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরনের অনিয়ম চলছে। আর এ উশৃংখলতা চলতে দেয়া যেতে পারেনা।
এ আদেশ জারী হওয়ার সংগে সংগে সকল সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও আধা সরকারী অফিসসমূহে কেবল মাত্র বাংলার মাধ্যমে নথিপত্র ও চিঠিপত্র লেখা হবে। এ বিষয়ে কোন অনাথা হলে উক্ত বিধি লংঘনকারীকে আইনানুগ শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন অফিস আদালতের কর্তা ব্যক্তিগণ সতর্কতার সাথে এ আদেশ কার্যকরী করবেন এবং আদেশ লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানের ব্যবস্থা করবেন। তবে বিদেশী সংস্থা বা সরকারের সাথে পত্রযােগাযােগ করার সময় বাংলার সাথে সাথে ইংরেজী অথবা সংশ্লিষ্ট ভাষায় একটি প্রতিলিপি পাঠানাে প্রয়ােজন। তেমনিভাবে বিদেশের কোন সরকার বা সংস্থার সাথে চুক্তি সম্পাদনের সময়ও বাংলার সাথে সাথে অনুমােদিত ইংরেজী বা সংশ্লিষ্ট ভাষায় প্রতিলিপি ব্যবহার করা চলবে।
এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকরী হবে।
স্বাক্ষর : শেখ মুজিবুর রহমান
১২.৩.৭৫
রাষ্ট্রপতি
Circular sent to the University of Dacca, D-Register, Dacca University Room, Bundle No. 287, File No. 423A, 1975.

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!