ভাষা সমস্যা সমাধানের জন্য আরবী হরফে বাংলা লেখার সােপারেশ
লাহােরে মালিক ফিরােজ খান নুনের বিবৃতি
লাহাের, ২৯শে মার্চ। পাঞ্জাব মােসলেম লীগ পরিষদ দলের নবনির্বাচিত নেতা মালিক ফিরােজ খান নুন অদ্য সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে, বাঙ্গালীরা যদি আরবী হরফে বা লিখিতে রাজী থাকেন। তাহা হইলে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হইলেও তাহার কোন আপত্তি থাকিবে না। জনাব নুন গতকল্য করাচী হইতে বিমানযােগে এখানে আগমন করিয়াছেন।
জনাব নুন বলেন যে, পূর্ববঙ্গের সাড়ে তিন শতাধিক মাদ্রাসায় উর্দু শিক্ষা দেওয়া হয় এবং আজই হােক কিংবা কালই হােক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলা লিখিতে আরবী হব। গ্রহণ করিবেন বলিয়া আশা করেন। তিনি উর্দুর সমর্থকদিগকে নমু হওয়ার উপদেশ দেন।
লাহাের হইতে আজাদের নিজস্ব সংবাদদাতার খবরে প্রকাশ, জনাব নন বলেন যে, বাঙ্গালীদের উপর জোর করিয়া উর্দুকে চাপাইয়া দেওয়ার যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত হইতে বাধ্য এবং তিনি নিজে পূর্ববঙ্গের অনিচ্ছুক জনগণের উপর উর্দুকে জোর করিয়া চাপাই দেওয়ার বিরােধ। মূল সমস্যা হরফ লইয়া, ভাষা লইয়া নহে। তবে পূর্ব বঙ্গবাসীদের বাংলা লেখার জন্য আরবী হরফ গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন : যদি পুশপের গণ বাংলা লেখার জন্য আরবী হরফ গ্রহণ করে তাহা হইলে পশ্চিম পাকিস্তানের সহিত পূণ পাকিস্তানের সংযােগ আরও ঘনিষ্ট হইয়া উঠিবে। এমন কি ভাষার প্রশ্ন লইয়া পশ্চিমবঙ্গের নিজের মতলব হাসিলের যে, শেষ আছে, তাহাও নিঃশেষে মুছিয়া যাইবে। জনাব নুন বলেন, অনিচ্ছুক ধৈৰ্য্য ধারণ করা এবং জোর পূর্বক উর্দু চাপাইবার চেষ্টা না করিয়া ধৈৰ্য্য ধারণ করা এবং বাংলা হরফের পরিবর্তন আনা উচিত। তাহা হইলেই সব ঠিক হইয়া যাইবে।
তিনি আরও বলেন যে, বাংলা ভাষায় প্রায় শতকরা ৯০টি শব্দ ফার্সী উর্দু আরবী এমনকি পাঞ্জাবী ভাষা হইতে উদ্ভূত। বর্তমানে হরফ লইয়া মূল সমস্যা দেখা দিয়াছে ভাষা লইয়া নহে।
ঢাকা প্রকাশ
১৬ নভেম্বর, ১৯৫২
পৃষ্ঠা ৪
সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত