You dont have javascript enabled! Please enable it!

একুশে ফেব্রুয়ারী
সম্পাদকীয়

এই ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ফেব্রুয়ারী আবার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনে এক নতুন আশা উদ্দীপনা, চাঞ্চল্য এবং বেদনামধুর করুণ স্মৃতির আমেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। এর গুরুত্ব অত্যন্ত সুদূর প্রসারী অন্ততঃ পূর্ব পাকিস্তানের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক জীবনে। আজ আমরা যেমন কারবালার করুণ ও মর্মভেদী কাহিনী স্মরণ করিয়া শুধু দুফোটা, তপ্ত চোখের জলই ফেলি না, সঙ্গে সঙ্গে অন্যায় অবিচার ও অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার একটা প্রবল প্রতিজ্ঞাও মনে আনি। ঠিক তেমনি এই একুশে ফেব্রুয়ারী যাকে পূর্ব পাকিস্তানের বীর মদমত্ত বেদুইনের কাছে অশ্রুশিক্ত চাহনিরই ইসারা দেয় না। ইহা চরম অসত্যকে ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে নিজের দাবী প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় সংকল্পের নতুন অভিব্যক্তিও স্পষ্ট করে তােলে।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের যে দাবীতে এই একুশে ফেব্রুয়ারীর জন্ম তাহা কেবল জনগণের বহু আকাক্ষিত সরকারের নিকট হইতে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাতই হয় না, উপরন্তু আগ্নেয়াস্ত্র সুসজ্জিত পুলিশ মিলিটারীর ঘৃণ্য, জঘন্য আচরণে হয়েছিল একান্তভাবে অপমানিত। রমনার রাজপথ, পিচঢালা রাজপথ হয়েছিল রক্তশিক্ত, জাগ্রত স্বাধীন দেশের জনতার রক্তে রঞ্জিত। কিন্তু রমনা সেই বক্ষ রক্ত নিঃশেষে শােষণ করিতে পারে নাই। সবটুকু যেমন পেয়েছিল মরু কারবালা। তাই আজ রক্তবীজ হতে শত শত লাখ লাখ বীর শহীদানের উগ্র কণ্ঠের আওয়াজ অনুভূত হইতেছে, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায়। এ পরিণতি কতদূর সুদূর প্রসারী হবে বলা শক্ত তবে এটা সত্য যে, একটা আদর্শ।
একবার রক্তের ভেতর দিয়া স্থাপিত হইয়া গেলে কোনদিন তাহা নিষ্ফল হয় নাই, হবেও না। কেননা এর ভিত্তিই রক্ত যা অনন্ত জীবনের একমাত্র উৎস, তাই।
ঢাকা প্রকাশ
২২ ফেব্রুয়ারী,১৯৫৩
পৃ.-২৩

সূত্র: ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র – রতন লাল চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!